ঢাকা ০৭:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুন্দরবনে বাঘ-কুমিরের সামনে থেকে হরিণের ঘাস সংগ্রহ করেন লাল মিয়া

মাসুদ রানা, মোংলা প্রতিনিধি
শত বছরের বৃদ্ধা মা আর স্ত্রী সন্তানদের মুখে দু’মুঠো খাবার জোগানোর জন্য বাঘ-কুমিরে মুখের কাছ থেকে হরিণের খাবার সংগ্রহ করে চলছে লাল মিয়ার সংসার। দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ জীবনের ঝুকি নিয়ে সুন্দরবনে আসা দেশ-বিদেশী পর্যটকদের বিনোদনের খোরাক জোগার করে আসছে লাল মিয়া। মাত্র ৫ টাকার এক মুঠো চরশাক দিয়েই সুন্দরবনে হরিণের দলকে হাতের নাগালে আনতে সক্ষম হচ্ছে পর্যটকরা। বনের মায়াবি হরিণের কাছ থেকে কেউ সেলফি আবার কেউ ভিডিও পোষ্ট দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। হরিণকে কাছ থেকে ধরতে আর ছবি তুলছে পর্যটন স্পট করমজলে শিশু-কিশোর,নারী-পুরুষসহ নানা বয়সের হাজারো পর্যটকরা। বন বিভাগ বলছে, হরিণের পছন্দের খাবার সংগ্রহ করা ঝুঁকি হলেও যা দিয়ে লাল মিয়ার চলে সংসার আর পর্যটকদের কাছ থেকে বন বিভাগ পাচ্ছে রাজ্বস্ব।

হরিণের খাবার মাত্র ৫ টাকা। এক মুঠি ৫ আর ৫ মুঠি ২০ টাকা। হরিণকে হাতে ধরে খাবার দিন, আর ছবি তুলুন। এসব বলে বনের করমজল স্পটে সুন্দরবনের গহীন থেকে সংগ্রহ করা হরিণের প্রিয় খাবার চরশাক বিক্রি করছেন লাল মিয়া। তার কাছ থেকে মাত্র ৫ টাকার (চরশাক) ঘাস কিনে মায়াবী হরিণকে হাতে ছুতে পারছেন পর্যটকরা। এতে আনন্দ বিনোদন পাচ্ছেন দেশ-বিদেশী দর্শনার্থীরা। লাল মিয়ার চরশাক বিক্রি আর হরিণকে নিজ হাতে ছুতে পারা যেন পর্যটকদের মহা আনন্দ।

সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রানী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটক ষ্পট’র হরিণের খাচার সামনে মোঃ  লাল মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি  বলেন, সুন্দরবনের করমজলে পর্যটকদের কাছে শাক বিক্রি করে চলে ৭৫ বছর বয়সী মোংলার সিগনাল টাওয়ার এলাকার বাসিন্ধা লাল মিয়ার। বৃদ্ধা মা সহ ৬ জনের সংসার। তবে এ শাক বিক্রির পেছনে রয়েছে অন্য গল্প। শত বছরেরও বেশি বয়সী মা জানেনা তার সন্তান কিভাবে বা কোথা থেকে রোজগার করে দু’মুঠো খাবার জোগার করছে। মা যদি জানতো বাঘ-কুমিরে মুখের কাছ থেকে হরিণের খাবার সংগ্রহ করতে হয়, তবে সুন্দরবনে যেতে দিতোনা মা বলে জানায় লাল মিয়া। বনের নদী ও খালে প্রচুর কুমির, তার মধ্যে বেশ কয়েকবার বাঘের মুখোমুখী হয়েছিল লাল মিয়া। তার পরেও বৃদ্ধ বয়সে অন্য কোন কাজ না পেয়ে এ পেশাকেই বেছে নিয়েছে তিনি। বন বিভাগের সহায়তা পেলে শেষ জীবন পর্যন্ত এভাবেই মা আর সন্তানের মুখোর খাবার জোগাতে এ কাজ করে যেতে চায় বৃদ্ধ লাল মিয়া। এতে পর্যটকরাও সহজে হরিণকে পাচ্ছন হাতের নাগালে, আর বন বিভাগ পাচ্ছেন রাজস্ব।

পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রানী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটক ষ্পট’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, বন্যপ্রাণির খাবার খুবই স্পর্শকাতর, সব খাবার খেলে প্রাণির সমস্যাও হতে পারে, তাই লাল মিয়া আমাদের খুবই বিশ্বস্ত বলেই বন থেকে তার সংগ্রহ করা খাবার বন্যপ্রানীরা খাচ্ছে। লাল মিয়া ঘাস বিক্রি করছে শুধু তার নিজের স্বার্থে নয়, যা দিয়ে বন বিভাগও আয় করছে রাজস্ব।

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সুন্দরবনে বাঘ-কুমিরের সামনে থেকে হরিণের ঘাস সংগ্রহ করেন লাল মিয়া

আপডেট সময় ১০:৪৭:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪
মাসুদ রানা, মোংলা প্রতিনিধি
শত বছরের বৃদ্ধা মা আর স্ত্রী সন্তানদের মুখে দু’মুঠো খাবার জোগানোর জন্য বাঘ-কুমিরে মুখের কাছ থেকে হরিণের খাবার সংগ্রহ করে চলছে লাল মিয়ার সংসার। দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ জীবনের ঝুকি নিয়ে সুন্দরবনে আসা দেশ-বিদেশী পর্যটকদের বিনোদনের খোরাক জোগার করে আসছে লাল মিয়া। মাত্র ৫ টাকার এক মুঠো চরশাক দিয়েই সুন্দরবনে হরিণের দলকে হাতের নাগালে আনতে সক্ষম হচ্ছে পর্যটকরা। বনের মায়াবি হরিণের কাছ থেকে কেউ সেলফি আবার কেউ ভিডিও পোষ্ট দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। হরিণকে কাছ থেকে ধরতে আর ছবি তুলছে পর্যটন স্পট করমজলে শিশু-কিশোর,নারী-পুরুষসহ নানা বয়সের হাজারো পর্যটকরা। বন বিভাগ বলছে, হরিণের পছন্দের খাবার সংগ্রহ করা ঝুঁকি হলেও যা দিয়ে লাল মিয়ার চলে সংসার আর পর্যটকদের কাছ থেকে বন বিভাগ পাচ্ছে রাজ্বস্ব।

হরিণের খাবার মাত্র ৫ টাকা। এক মুঠি ৫ আর ৫ মুঠি ২০ টাকা। হরিণকে হাতে ধরে খাবার দিন, আর ছবি তুলুন। এসব বলে বনের করমজল স্পটে সুন্দরবনের গহীন থেকে সংগ্রহ করা হরিণের প্রিয় খাবার চরশাক বিক্রি করছেন লাল মিয়া। তার কাছ থেকে মাত্র ৫ টাকার (চরশাক) ঘাস কিনে মায়াবী হরিণকে হাতে ছুতে পারছেন পর্যটকরা। এতে আনন্দ বিনোদন পাচ্ছেন দেশ-বিদেশী দর্শনার্থীরা। লাল মিয়ার চরশাক বিক্রি আর হরিণকে নিজ হাতে ছুতে পারা যেন পর্যটকদের মহা আনন্দ।

সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রানী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটক ষ্পট’র হরিণের খাচার সামনে মোঃ  লাল মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি  বলেন, সুন্দরবনের করমজলে পর্যটকদের কাছে শাক বিক্রি করে চলে ৭৫ বছর বয়সী মোংলার সিগনাল টাওয়ার এলাকার বাসিন্ধা লাল মিয়ার। বৃদ্ধা মা সহ ৬ জনের সংসার। তবে এ শাক বিক্রির পেছনে রয়েছে অন্য গল্প। শত বছরেরও বেশি বয়সী মা জানেনা তার সন্তান কিভাবে বা কোথা থেকে রোজগার করে দু’মুঠো খাবার জোগার করছে। মা যদি জানতো বাঘ-কুমিরে মুখের কাছ থেকে হরিণের খাবার সংগ্রহ করতে হয়, তবে সুন্দরবনে যেতে দিতোনা মা বলে জানায় লাল মিয়া। বনের নদী ও খালে প্রচুর কুমির, তার মধ্যে বেশ কয়েকবার বাঘের মুখোমুখী হয়েছিল লাল মিয়া। তার পরেও বৃদ্ধ বয়সে অন্য কোন কাজ না পেয়ে এ পেশাকেই বেছে নিয়েছে তিনি। বন বিভাগের সহায়তা পেলে শেষ জীবন পর্যন্ত এভাবেই মা আর সন্তানের মুখোর খাবার জোগাতে এ কাজ করে যেতে চায় বৃদ্ধ লাল মিয়া। এতে পর্যটকরাও সহজে হরিণকে পাচ্ছন হাতের নাগালে, আর বন বিভাগ পাচ্ছেন রাজস্ব।

পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রানী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটক ষ্পট’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, বন্যপ্রাণির খাবার খুবই স্পর্শকাতর, সব খাবার খেলে প্রাণির সমস্যাও হতে পারে, তাই লাল মিয়া আমাদের খুবই বিশ্বস্ত বলেই বন থেকে তার সংগ্রহ করা খাবার বন্যপ্রানীরা খাচ্ছে। লাল মিয়া ঘাস বিক্রি করছে শুধু তার নিজের স্বার্থে নয়, যা দিয়ে বন বিভাগও আয় করছে রাজস্ব।

আরো পড়ুন : মোংলায় নিখোঁজের ২৪ ঘন্টা পর জেলের লাশ উদ্ধার