ঢাকা ০৯:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১ জুন থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে প্রবেশ ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ

মাসুদ রানা,  মোংলা প্রতিনিধি:
সরকার ও বন বিভাগের নির্দেশনায় শনিবার ১ জুন থেকে সুন্দরবনে তিন মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে দেশী-বিদেশী পর্যটক প্রবেশ ও বনের নদী-খালে প্রকারের সকল প্রকারের মাছ ধরা। মাছের প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় বনের নদী-খাল নিরাপদ ও বন্যপ্রানীদের বিচরণ নির্ভিগ্ন ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরায় ১জুন শনিবার থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টানা এ তিন মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে। এ সময় মানুষ জোঝাই জালী বোট ও নৌযান সহ পর্যটক প্রবেশ, সাধারণ মানুষের চলাচলসহ সুন্দরবনের অভ্যান্তরে নদী-খালে মাছ ধরা সহ সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
বন বিভাগ সুত্রে জানা যায়, সুন্দরবনে মৎস্য সম্পদ রায় সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাস সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ থাকত। কিন্ত ২০২২ সালে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এ নিষেধাজ্ঞা এক মাস বৃদ্ধি করে ১ জুন থেকে তিন মাসের জন্য সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই থেকে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস বনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ ও বনে বন্যপ্রানীদের প্রজনন ও চলাচল নির্ভিঘ্ন করতে পর্যটক প্রবেশও বন্ধ ঘোষনা করে সরকার।
বন বিভাগ ও মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এখন সুন্দরবনে ২৫১ প্রজাতির মাছের প্রজনন মৌসুম। তাই বন বিভাগ থেকে জেলেদের জন্য সব ধরনের পারমিট বন্ধ রাখা হবে। বনের নদী ও খালে নৌযান চলাচল করলে মাছের ডিম ছাড়তে সমস্যা হবে তাই সব ধরনের নৌযানও বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া বনে ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ৩৫ প্রকারের সরীসৃপ, ৪২ প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এখন তাদের প্রজনন মৌসুম চলছে। এসব প্রাণীর মধ্যে রয়েছে বাঘ, হরিণ, শুকর, বানর, কুমির, ডলফিন, ভোঁদড়, বন বিড়াল ও মেছো বাঘসহ অন্যান্য প্রাণী।
সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক এক পাঁচ ভাগ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক মিহির কুমার দো জানান, জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী-খালের মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এ ছাড়া এই সময়ে বন্য প্রাণীরও প্রজনন মৌসুম। এই তিন মাস বনে পর্যটক ও জেলে না গেলে বনের জীববৈচিত্র ও বন্য প্রাণী নিরাপদে থাকবে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনে প্রাণী ও জীববৈচিত্রের যে তি হয়েছে, তা দ্রুত কাটিয়ে উঠবে আগামী তিন মাস যদি নদী-খালে এবং বনের পর্যটক প্রবেশ না করে। নতুন করে আবার জীবন ফিড়ে পাবে বিশ্বের দরবারে পরিচিতি পাওয়া বাংলাদেশের সুন্দরবন।
পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র এবং পর্যটক ষ্পট’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, সরকার তার রাজস্বের দিকে না তাকিয়ে সুন্দরবন ও বনে বিচরণকারী প্রাণী সহ বিভিন্ন খালের মাছ রায় উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য আগামী তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক ও জেলেদের প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। এই সময় আমাদের বন বিভাগের পক্ষ থেকে অসাধু মৎস্য আহরণকারী ও বিষ দিয়ে বন্যপ্রানী নিধনকারীদের রুখতে কঠোর অবস্থানে থাকবে বনরক্ষীরা। এব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় পুর্ব সুন্দরবনের সকল ষ্টেশন ও ফাড়ি অফিসে থাকা বনকর্মীদের বনে অভ্যান্তরে নজদাড়ীর বারানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।
মোংলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন বিশ্বাস বলেন, মোংলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৮ হাজার ৪০০ জন। তবে মোংলায় জেলেদের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। ভৌগোলিক কারণেই সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল এসকল মানুষগুলো। মোংলায় অনেক জেলে পরিবারের বসবাস, যারা বংশপরম্পরায় বনজীবী। তারা সারা বছর সুন্দরবনসংলগ্ন নদ-নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এ তিন মাস বন্ধ থাকার সময় সরকারী ভাবে তাদের সহায়তার আওতায় আনা হবে।
ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

১ জুন থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে প্রবেশ ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ

আপডেট সময় ০৮:৪৬:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মে ২০২৪
মাসুদ রানা,  মোংলা প্রতিনিধি:
সরকার ও বন বিভাগের নির্দেশনায় শনিবার ১ জুন থেকে সুন্দরবনে তিন মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে দেশী-বিদেশী পর্যটক প্রবেশ ও বনের নদী-খালে প্রকারের সকল প্রকারের মাছ ধরা। মাছের প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় বনের নদী-খাল নিরাপদ ও বন্যপ্রানীদের বিচরণ নির্ভিগ্ন ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরায় ১জুন শনিবার থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টানা এ তিন মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে। এ সময় মানুষ জোঝাই জালী বোট ও নৌযান সহ পর্যটক প্রবেশ, সাধারণ মানুষের চলাচলসহ সুন্দরবনের অভ্যান্তরে নদী-খালে মাছ ধরা সহ সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
বন বিভাগ সুত্রে জানা যায়, সুন্দরবনে মৎস্য সম্পদ রায় সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাস সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ থাকত। কিন্ত ২০২২ সালে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এ নিষেধাজ্ঞা এক মাস বৃদ্ধি করে ১ জুন থেকে তিন মাসের জন্য সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই থেকে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস বনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ ও বনে বন্যপ্রানীদের প্রজনন ও চলাচল নির্ভিঘ্ন করতে পর্যটক প্রবেশও বন্ধ ঘোষনা করে সরকার।
বন বিভাগ ও মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এখন সুন্দরবনে ২৫১ প্রজাতির মাছের প্রজনন মৌসুম। তাই বন বিভাগ থেকে জেলেদের জন্য সব ধরনের পারমিট বন্ধ রাখা হবে। বনের নদী ও খালে নৌযান চলাচল করলে মাছের ডিম ছাড়তে সমস্যা হবে তাই সব ধরনের নৌযানও বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া বনে ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ৩৫ প্রকারের সরীসৃপ, ৪২ প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এখন তাদের প্রজনন মৌসুম চলছে। এসব প্রাণীর মধ্যে রয়েছে বাঘ, হরিণ, শুকর, বানর, কুমির, ডলফিন, ভোঁদড়, বন বিড়াল ও মেছো বাঘসহ অন্যান্য প্রাণী।
সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক এক পাঁচ ভাগ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক মিহির কুমার দো জানান, জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী-খালের মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এ ছাড়া এই সময়ে বন্য প্রাণীরও প্রজনন মৌসুম। এই তিন মাস বনে পর্যটক ও জেলে না গেলে বনের জীববৈচিত্র ও বন্য প্রাণী নিরাপদে থাকবে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনে প্রাণী ও জীববৈচিত্রের যে তি হয়েছে, তা দ্রুত কাটিয়ে উঠবে আগামী তিন মাস যদি নদী-খালে এবং বনের পর্যটক প্রবেশ না করে। নতুন করে আবার জীবন ফিড়ে পাবে বিশ্বের দরবারে পরিচিতি পাওয়া বাংলাদেশের সুন্দরবন।
পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র এবং পর্যটক ষ্পট’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, সরকার তার রাজস্বের দিকে না তাকিয়ে সুন্দরবন ও বনে বিচরণকারী প্রাণী সহ বিভিন্ন খালের মাছ রায় উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য আগামী তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক ও জেলেদের প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। এই সময় আমাদের বন বিভাগের পক্ষ থেকে অসাধু মৎস্য আহরণকারী ও বিষ দিয়ে বন্যপ্রানী নিধনকারীদের রুখতে কঠোর অবস্থানে থাকবে বনরক্ষীরা। এব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় পুর্ব সুন্দরবনের সকল ষ্টেশন ও ফাড়ি অফিসে থাকা বনকর্মীদের বনে অভ্যান্তরে নজদাড়ীর বারানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।
মোংলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন বিশ্বাস বলেন, মোংলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৮ হাজার ৪০০ জন। তবে মোংলায় জেলেদের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। ভৌগোলিক কারণেই সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল এসকল মানুষগুলো। মোংলায় অনেক জেলে পরিবারের বসবাস, যারা বংশপরম্পরায় বনজীবী। তারা সারা বছর সুন্দরবনসংলগ্ন নদ-নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এ তিন মাস বন্ধ থাকার সময় সরকারী ভাবে তাদের সহায়তার আওতায় আনা হবে।
আরো পড়ুন : মোংলায় একজন মানুষও না খেয়ে থাকবেনা : খুলনা সিটি মেয়র