ঢাকা ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
জুলাই আন্দোলন নিয়ে ৮ সিনেমা; নির্মাতা চূড়ান্ত বেশি সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন : প্রেস সচিব পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন আন্দোলনে আহত ১০০ জন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ১৪৪ ধারা ভেঙে সচিবালয় ঘেরাওয়ের চেষ্টা, পুলিশের ধাওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার কাজের তালিকা দিলেন উপদেষ্টা মাহফুজ সরকার গঠনের পর অভিযুক্ত কাউকে দেশত্যাগ করতে দেয়া হয়নি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ট্রুডো কেন হঠাৎ পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন? কে হতে যাচ্ছে তার উত্তরসূরি? গঠিত হচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’,  ইরানে হিজাব খুলে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের প্রতিবাদ শক্তিশালী ভূমিকম্পে তিব্বতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৩

না ফেরার দেশে কবি হেলাল হাফিজ

‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’, এবং ‘যে জলে আগুন জ্বলে’র কবি হেলাল হাফিজ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নাহ ইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে চিরকুমার এই কবির বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মোঃ রেজাউর রহমান বলেছেন, ”শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে হেলাল হাফিজ যে হোস্টেলে থাকতেন, সেখানকার লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল।”

জীবদ্দশায় তার মাত্র তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ রাজনৈতিক ভাষা আর আবেগের মিশেলে প্রকাশের পরপরই তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৮৬ সালে প্রকাশের পর থেকে এ পর্যন্ত বইটির বৈধ মুদ্রণই হয়েছে ৩৩ বারের বেশি।

রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে তার কবিতার পঙতি যেমন ব্যবহৃত হয়েছে, তেমনি আশির দশকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক সামাজিক প্রতিচ্ছবি বলা হয় তার কবিতাকে।

হেলাল হাফিজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। তারো ১৭ বছর আগে তার কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে। তাঁর প্রথম বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। দীর্ঘসময় নিজেকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে নিয়েছিলেন হেলাল হাফিজ। আড়াই দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা ৭১’। তৃতীয় ও সর্বশেষ বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদোনা’প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় তার লেখা ওই কবিতার প্রথম দুইটি লাইন ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়; এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়,’ রাজনৈতিক স্লোগানে পরিণত হয় এবং এখনো পর্যন্ত এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশিবার ব্যবহৃত রাজনৈতিক স্লোগান।

হেলাল হাফিজ নিজে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, কবিতাটি ওই সময় কোনো পত্রিকা প্রকাশ করার সাহস পায়নি। কিন্তু কবিতার প্রথম দুটি লাইন আহমদ ছফা এবং কবি হুমায়ুন কবির ১৯৬৯ সালে একরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়াল লিখন করে দিয়েছিলেন। এরপর ছাত্রাবস্থাতেই কবি হিসেবে তারকা খ্যাতি পেয়ে যান হেলাল হাফিজ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে হেলাল হাফিজের দুই ব্যাচ জুনিয়র ছিলেন কবি শামীম আজাদ, কিন্তু তারা বন্ধু-প্রতিম এবং সমসাময়িক সাহিত্যিক ছিলেন। কবি হিসেবে হেলাল হাফিজকে ‘বিরল-প্রজ’ একজন কবি বলে মনে করেন শামীম আজাদ। “উনি কম লিখেছেন কিন্তু প্রবল জনপ্রিয় ছিলেন। কবিতা ছিল ছোট কিন্তু ভাব ভাব প্রকাশ করতে সেগুলো।”

চিরকুমার হেলাল হাফিজকে বলা হয় প্রেম আর দ্রোহের কবি। জীবনের বড় একটি সময় কাটিয়েছেন তোপখানা রোড আর সেগুনবাগিচার আবাসিক হোটেলে, রোজ খেতে যেতেন জাতীয় প্রেসক্লাবে। কিন্তু সাহিত্য সমালোচকেরা মনে করেন তার ব্যতিক্রমী ও অপ্রচলিত জীবন তার কবিতায় ছাপ ততটা রাখেনি, বরং তার কবিতা ছিল সরল আর প্রাঞ্জল।

কবি এবং সাংবাদিক হাসান হাফিজ বলেছেন, কবিতার বিরুদ্ধে সাধারণভাবে দুর্বোধ্যতার যে অভিযোগ সেটি হেলাল হাফিজের বেলায় একেবারেই ছিল না। “এক্ষেত্রে তার শক্তি ছিল সহজ সরল ভাষায় মনের ভাব প্রকাশের ক্ষমতা। উনি সরল ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতেন, আর তার ফলেই মানুষের একেবারে কাছে পৌঁছে গেছেন তিনি। ”

তিনি সাংবাদিক ও সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করেছেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন।

ব্যক্তিজীবনে খুব শান্ত আর অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ ছিলেন। তবে কবি শামীম আজাদ বলেছেন, হেলাল হাফিজ ছিলেন যে কোন আড্ডার প্রাণ। “ব্যক্তিগতভাবে ও ছিল খুবই শান্ত চুপচাপ ধরণের, কিন্তু আড্ডার প্রাণ ছিল।”

সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন, এর মধ্যে ২০১৩ সালে তিনি কবিতায় বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান।

তার দ্বিতীয় এবং শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। কবির কলম থেমে গেলেও হেলাল হাফিজ বাংলা কবিতায় প্রাসঙ্গিক থাকবেন আরো অনেক বছর সে কথা সহজেই বলা যায়।

দ্রোহ আর প্রেমের কবি হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য কেটেছে সেখানেই। ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। উত্তাল ষাটের দশক হয়ে ওঠে তার কবিতার উপকরণ। তারপর দীর্ঘদিন তিনি কবিতা থেকে দূরে ছিলেন। এবার চিরতরে পৃথিবী থেকেই চির বিদায় নিলেন।

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

না ফেরার দেশে কবি হেলাল হাফিজ

আপডেট সময় ০৬:৩৮:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’, এবং ‘যে জলে আগুন জ্বলে’র কবি হেলাল হাফিজ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নাহ ইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে চিরকুমার এই কবির বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মোঃ রেজাউর রহমান বলেছেন, ”শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে হেলাল হাফিজ যে হোস্টেলে থাকতেন, সেখানকার লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল।”

জীবদ্দশায় তার মাত্র তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ রাজনৈতিক ভাষা আর আবেগের মিশেলে প্রকাশের পরপরই তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৮৬ সালে প্রকাশের পর থেকে এ পর্যন্ত বইটির বৈধ মুদ্রণই হয়েছে ৩৩ বারের বেশি।

রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে তার কবিতার পঙতি যেমন ব্যবহৃত হয়েছে, তেমনি আশির দশকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক সামাজিক প্রতিচ্ছবি বলা হয় তার কবিতাকে।

হেলাল হাফিজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। তারো ১৭ বছর আগে তার কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে। তাঁর প্রথম বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। দীর্ঘসময় নিজেকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে নিয়েছিলেন হেলাল হাফিজ। আড়াই দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা ৭১’। তৃতীয় ও সর্বশেষ বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদোনা’প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় তার লেখা ওই কবিতার প্রথম দুইটি লাইন ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়; এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়,’ রাজনৈতিক স্লোগানে পরিণত হয় এবং এখনো পর্যন্ত এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশিবার ব্যবহৃত রাজনৈতিক স্লোগান।

হেলাল হাফিজ নিজে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, কবিতাটি ওই সময় কোনো পত্রিকা প্রকাশ করার সাহস পায়নি। কিন্তু কবিতার প্রথম দুটি লাইন আহমদ ছফা এবং কবি হুমায়ুন কবির ১৯৬৯ সালে একরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়াল লিখন করে দিয়েছিলেন। এরপর ছাত্রাবস্থাতেই কবি হিসেবে তারকা খ্যাতি পেয়ে যান হেলাল হাফিজ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে হেলাল হাফিজের দুই ব্যাচ জুনিয়র ছিলেন কবি শামীম আজাদ, কিন্তু তারা বন্ধু-প্রতিম এবং সমসাময়িক সাহিত্যিক ছিলেন। কবি হিসেবে হেলাল হাফিজকে ‘বিরল-প্রজ’ একজন কবি বলে মনে করেন শামীম আজাদ। “উনি কম লিখেছেন কিন্তু প্রবল জনপ্রিয় ছিলেন। কবিতা ছিল ছোট কিন্তু ভাব ভাব প্রকাশ করতে সেগুলো।”

চিরকুমার হেলাল হাফিজকে বলা হয় প্রেম আর দ্রোহের কবি। জীবনের বড় একটি সময় কাটিয়েছেন তোপখানা রোড আর সেগুনবাগিচার আবাসিক হোটেলে, রোজ খেতে যেতেন জাতীয় প্রেসক্লাবে। কিন্তু সাহিত্য সমালোচকেরা মনে করেন তার ব্যতিক্রমী ও অপ্রচলিত জীবন তার কবিতায় ছাপ ততটা রাখেনি, বরং তার কবিতা ছিল সরল আর প্রাঞ্জল।

কবি এবং সাংবাদিক হাসান হাফিজ বলেছেন, কবিতার বিরুদ্ধে সাধারণভাবে দুর্বোধ্যতার যে অভিযোগ সেটি হেলাল হাফিজের বেলায় একেবারেই ছিল না। “এক্ষেত্রে তার শক্তি ছিল সহজ সরল ভাষায় মনের ভাব প্রকাশের ক্ষমতা। উনি সরল ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতেন, আর তার ফলেই মানুষের একেবারে কাছে পৌঁছে গেছেন তিনি। ”

তিনি সাংবাদিক ও সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করেছেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন।

ব্যক্তিজীবনে খুব শান্ত আর অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ ছিলেন। তবে কবি শামীম আজাদ বলেছেন, হেলাল হাফিজ ছিলেন যে কোন আড্ডার প্রাণ। “ব্যক্তিগতভাবে ও ছিল খুবই শান্ত চুপচাপ ধরণের, কিন্তু আড্ডার প্রাণ ছিল।”

সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন, এর মধ্যে ২০১৩ সালে তিনি কবিতায় বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান।

তার দ্বিতীয় এবং শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। কবির কলম থেমে গেলেও হেলাল হাফিজ বাংলা কবিতায় প্রাসঙ্গিক থাকবেন আরো অনেক বছর সে কথা সহজেই বলা যায়।

দ্রোহ আর প্রেমের কবি হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য কেটেছে সেখানেই। ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। উত্তাল ষাটের দশক হয়ে ওঠে তার কবিতার উপকরণ। তারপর দীর্ঘদিন তিনি কবিতা থেকে দূরে ছিলেন। এবার চিরতরে পৃথিবী থেকেই চির বিদায় নিলেন।