ঢাকা ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনলাইন জুয়ায় সর্বশান্ত হচ্ছে রংপুর সদরের যুবকরা

মন্টু। বয়স ২৬ বছর। এক সন্তানের জনক। হঠাৎ দাড়ি রেখেছে। নিয়মিত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ছে। চোখে মুখে সব হারিয়ে ফেলার তীব্র কষ্ট। তার এ হঠাৎ পরিবর্তনের কারণ জানতে গিয়ে জানা গেছে অনলাইন জুয়ায় জমানো মুলধন হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছে সে।

এ ভাবে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত কারো কারো স্ত্রী সন্তান বাড়ী ছেড়ে চলে গেছে। কেউ কেউ ঋণ করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রংপুর সদর উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন জুয়া। এতে আসক্ত হয়ে হাজারো নারী-পুরুষ সর্বস্ব খুইয়ে পথে বসেছে। সেই সঙ্গে পাচার হচ্ছে দেশের অর্থ। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলা ‘ওয়ানএক্সবেট’ ‘বাবু৮৮’সহ বিভিন্ন জুয়ার অ্যাপসের বিস্তার ঘটিয়ে কোটিপতি বনে যাচ্ছেন জুয়ার স্থানীয় মাস্টার এজেন্ট ও সাব এজেন্টরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিশু-কিশোর-যুবক – যুবতী সবার হাতেই স্মার্ট ফোন। বাড়ির কোনে, হাটে মাঠে ঘাটে মোবাইলের স্ক্রিন স্কুল করতে দেখা যায় তাদের। কেউ গেমিংয়ে ব্যস্ত, কেউ অনলাইন জুয়ায়। যাদের নিজস্ব মোবাইল নেই, তারাও জড়িয়ে পড়ছেন অনলাইন জুয়ায়। সেক্ষেত্রে মোবাইল ভাড়া নিয়ে জুয়ায় বিনিয়োগ করেন তারা। এক্ষেত্রে জুয়াড়িদের অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে ও ডলার সরবরাহ করতে গড়ে উঠেছে এজেন্ট সিন্ডিকেট। রয়েছে মাস্টার এজেন্ট ও সাব এজেন্ট। এসব এজেন্টের কাছ থেকে বাংলাদেশি মুদ্রার বিনিময়ে ডলার সংগ্রহ করেন জুয়াড়িরা। সহজে প্রচুর টাকা উপার্জনের লোভে পড়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ, বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও তরুণ যুবকেরা অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন। বাদ যাচ্ছে না নারীরাও। জুয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে সর্বস্ব হারাতে বসেছেন অনেকে। এ কারণে বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি ও দাম্পত্য কলহ।

সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে সদ্যপুস্করিনী, হরিদেবপুর ও মমিনপুর ইউনিয়নের যুবকরা অনলাইন জুয়ায় সবচেয়ে বেশি আসক্ত। তাদের দেওয়া তথ্যে জানতে পাওয়া গেছে, ওই তিন ইউনিয়নে ২৩ জন মাস্টার এজেন্টের নাম। তাদের আওতায় রয়েছে আরো ১২৫ জন সাব এজেন্ট। এদের মধ্যে রয়েছে কয়েকজন নারীও। রফিক নামের একজন জানান, এজেন্টরা টাকা ভরার সময় জুয়াড়িদের কাছ থেকে প্রতি হাজারে ৬০ টাকা হারে কমিশন কেটে নেন। আবার টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে হাজারে পঁচিশ টাকা কমিশন কাটা হয়।

এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, এটা সম্পূর্ণ অবৈধ একটা খেলা। অনলাইন জুয়ার বিষয়টি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির সভায় গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হবে। ইতোমধ্যে থানা পুলিশকে এ বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

অনলাইন জুয়ায় সর্বশান্ত হচ্ছে রংপুর সদরের যুবকরা

আপডেট সময় ১০:০৯:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪

মন্টু। বয়স ২৬ বছর। এক সন্তানের জনক। হঠাৎ দাড়ি রেখেছে। নিয়মিত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ছে। চোখে মুখে সব হারিয়ে ফেলার তীব্র কষ্ট। তার এ হঠাৎ পরিবর্তনের কারণ জানতে গিয়ে জানা গেছে অনলাইন জুয়ায় জমানো মুলধন হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছে সে।

এ ভাবে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত কারো কারো স্ত্রী সন্তান বাড়ী ছেড়ে চলে গেছে। কেউ কেউ ঋণ করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রংপুর সদর উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন জুয়া। এতে আসক্ত হয়ে হাজারো নারী-পুরুষ সর্বস্ব খুইয়ে পথে বসেছে। সেই সঙ্গে পাচার হচ্ছে দেশের অর্থ। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলা ‘ওয়ানএক্সবেট’ ‘বাবু৮৮’সহ বিভিন্ন জুয়ার অ্যাপসের বিস্তার ঘটিয়ে কোটিপতি বনে যাচ্ছেন জুয়ার স্থানীয় মাস্টার এজেন্ট ও সাব এজেন্টরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিশু-কিশোর-যুবক – যুবতী সবার হাতেই স্মার্ট ফোন। বাড়ির কোনে, হাটে মাঠে ঘাটে মোবাইলের স্ক্রিন স্কুল করতে দেখা যায় তাদের। কেউ গেমিংয়ে ব্যস্ত, কেউ অনলাইন জুয়ায়। যাদের নিজস্ব মোবাইল নেই, তারাও জড়িয়ে পড়ছেন অনলাইন জুয়ায়। সেক্ষেত্রে মোবাইল ভাড়া নিয়ে জুয়ায় বিনিয়োগ করেন তারা। এক্ষেত্রে জুয়াড়িদের অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে ও ডলার সরবরাহ করতে গড়ে উঠেছে এজেন্ট সিন্ডিকেট। রয়েছে মাস্টার এজেন্ট ও সাব এজেন্ট। এসব এজেন্টের কাছ থেকে বাংলাদেশি মুদ্রার বিনিময়ে ডলার সংগ্রহ করেন জুয়াড়িরা। সহজে প্রচুর টাকা উপার্জনের লোভে পড়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ, বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও তরুণ যুবকেরা অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন। বাদ যাচ্ছে না নারীরাও। জুয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে সর্বস্ব হারাতে বসেছেন অনেকে। এ কারণে বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি ও দাম্পত্য কলহ।

সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে সদ্যপুস্করিনী, হরিদেবপুর ও মমিনপুর ইউনিয়নের যুবকরা অনলাইন জুয়ায় সবচেয়ে বেশি আসক্ত। তাদের দেওয়া তথ্যে জানতে পাওয়া গেছে, ওই তিন ইউনিয়নে ২৩ জন মাস্টার এজেন্টের নাম। তাদের আওতায় রয়েছে আরো ১২৫ জন সাব এজেন্ট। এদের মধ্যে রয়েছে কয়েকজন নারীও। রফিক নামের একজন জানান, এজেন্টরা টাকা ভরার সময় জুয়াড়িদের কাছ থেকে প্রতি হাজারে ৬০ টাকা হারে কমিশন কেটে নেন। আবার টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে হাজারে পঁচিশ টাকা কমিশন কাটা হয়।

এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, এটা সম্পূর্ণ অবৈধ একটা খেলা। অনলাইন জুয়ার বিষয়টি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির সভায় গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হবে। ইতোমধ্যে থানা পুলিশকে এ বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।