পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে বেড়েছে বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত। উপজেলা সদর সহ বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে যখন তখন পথচারীদের উপর চড়াও হচ্ছে কুকুর। সুযোগ বুঝে দিচ্ছে কামড়। কুকুরের ভয়ে চলাফেরা কঠিন হয়ে পড়েছে এলাকায়। ইদানিং দলবদ্ধভাবে বেওয়ারিশ কুকুরগুলো বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করে গরু, ছাগল, হাঁস,মুরগীগুলোকেও আক্রমন করছে।
গত বুধবার (০২ অক্টোবর) সকালে উপজেলার রাধানগর গ্রামের প্রায় ১০ জন বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমনের শিকার হয়েছেন। কুকুরের আক্রমনে আহতরা হলো, রাধানগর গ্রামের মকবুল হোসেনের শিশু কন্যা মনি আক্তার(৫), মৃত সূর্য্য মোহনের পুত্র কুলিন চন্দ্র(৫০), মৃত ক্ষির মোহনের পুত্র লঙ্কেশ^র(৬০), মহিম উদ্দীনের স্ত্রী মসলিমা বেগম(৬৫), মৃত ইসমাইল হোসেনের পুত্র রুহুল আমিন(৫৮), হাফিজ উদ্দীনের পুত্র সহিদুল ইসলাম(৩২), মালিগাঁও গ্রামের মৃত কলিম উদ্দীনের স্ত্রী জাহানারা ( ৬০), সহিম উদ্দীনের স্ত্রী সালেহা বেগম (৬০) ,স্কুল ছাত্রী ২জন।
জনৈক জনপ্রতিনিধি বলেন, বেওয়ারিশ কুকুরগুলো উপজেলার ফকিরগঞ্জ বাজার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বর, উপজেলা পরিষদ চত্বর সহ বিভিন্ন এলাকায় দলবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সুযোগ পেলে ছাগল, হাঁস-মুরগী ধরে ধরে খেয়ে ফেলছে বা মেরে ফেলছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শত শত হাঁস মুরগী কুকুরে খেয়েছে, প্রতিনিয়ত গরু-ছাগলগুলোকে আক্রমন করছে। আটোয়ারীর এমন কোন পাড়া-মহল্লা নেই- যেখানে কুকুরের উৎপাত নেই।
জনৈক শিক্ষক জানান, কুকুরের উৎপাতের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। জনৈক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, কুকুরের আক্রমনের ভয়ে আপাদত সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছি না। কুকুরের কারণে রাস্তাঘাটে চলাচল নিরাপদ নয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. অফিসার ডা. মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, রাধানগর থেকে কয়েকজন কুকুর কামড়ানো রোগী হাসপাতালে এসেছিল। আটোয়ারী হাসপাতালে র্যাবিক্স ভ্যাকসিন না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পঞ্চগড় বা ঠাকুরগাঁওয়ে গিয়ে ভ্যাক্সিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কুকুরের কামড় বা আঁচড়ে জলাতঙ্ক রোগ ছড়াতে পারে। এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে মৃত্যু অনিবার্য। তবে সময়মত সঠিক ব্যবস্থা বা টিকা গ্রহণ করলে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য।
তিনি আরো বলেন, কুকুর কামড় বা আঁচড় দিলে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষারযুক্ত সাবান পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধৌত করতে হবে। এরপর যথাসময়ে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ভ্যাক্সিন/টিকা নিতে হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র্যাবিক্স ভ্যাক্সিন থাকলে কুকুর কামড়ানো রোগীরা হয়রানীর শিকার হতো না।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, কুকুর নিধনে সরকারের আইন আর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ২০১২ সাল থেকেই। পরিবর্তে বিচ্ছিন্ন ও অনিয়মিতভাবে চালু হয়েছে কুকুরের বন্ধা ও জলাতঙ্ক রোগের টিকা দেয়া কর্মসুচি।
তিনি বলেন, একটি মাদি কুকুর বছরে আটটি পর্যন্ত বাচ্চা দিতে পারে। কুকুর মারা বন্ধ, আবার বন্ধ্যাকরণও অনিয়মিত, তাই কুকুরের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়েছে।
আরো পড়ুন : আটোয়ারীতে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা