ঢাকা ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমন্বয়ক মাহিন-আম্মারকে রাজশাহীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় মহানগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টের জলিল বিশ্বাসের মার্কেটের সামনে সংবাদ সম্মেলনে জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এসব অভিযোগ তোলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলা ও মহানগর শাখা কমিটিতে বিতর্কিতদের রাখার অভিযোগ তুলে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী জুবায়ের রশীদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হাজারও শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে মুক্তি লাভ করে। এই বিপ্লবে সারাদেশের মতো রাজশাহীর ছাত্রজনতাও বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে। ১০ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজশাহীর শিক্ষার্থী ও জনসাধারণ “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাজশাহী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়” ব্যানারে রাজপথে লড়াই করেছে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অকুতোভয় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

এই আন্দোলনের বীর সন্তান, রাজশাহীর গর্বিত দুই কৃতিসন্তান আলী রায়হান ও সাকিব আঞ্জুম নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও ক্ষোভের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি একটি স্বার্থান্বেষী মহল জুলাই বিপ্লবের প্রকৃত নায়কদের মাইনাস করে, ৫ আগস্টের পর সুবিধাভোগী কিছু অনুপ্রবেশকারীর মাধ্যমে প্রহসনের পকেট কমিটি গঠন করেছে।

গত ৩০ জানুয়রি “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী জেলা” এবং “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী মহানগর” নামে ঘোষিত এই কমিটিগুলোতে প্রকৃত আন্দোলনের সাহসী, বিপ্লবী এবং নির্ভরযোগ্য নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে আন্দোলনের চেতনাবিরোধী, বহিরাগত ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। আন্দোলনবিরোধী এসব ব্যক্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাজারে চাঁদাবাজি, ক্ষমতার দখল এবং সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত।

অভিযোগ উঠেছে, ফাতিন মাহাদী ও মাহিন সরকার মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই কমিটি গঠন করেছে। আরও উদ্বেগের বিষয়, এই কমিটির নেতৃত্বে এমন অনেককে রাখা হয়েছে, যারা সরাসরি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এমনকি আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদের ছাত্র সংগঠনের মূল নেতৃত্বও এই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে।

রাজশাহী মহানগরীতে আন্দোলনে সেসময় যারা রাজশাহীর বাইরে ছিল, আন্দোলনে সম্পৃক্তই ছিল না, তাদেরকেও কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রকৃত লড়াকু যোদ্ধাদের নাম সেখানে নেই। এটি সরাসরি জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অপমান এবং রাজশাহীর ত্যাগী ছাত্রজনতার সঙ্গে প্রতারণার শামিল।
এছাড়াও, একজন হত্যা মামলার অন্যতম আসামিকে এই কমিটির শীর্ষ পদে রাখা হয়েছে, যা এই কমিটির প্রকৃত উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দেয়। এরা আন্দোলনের চেতনা বিকৃত করে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থসিদ্ধির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার ও তার সহযোগী কিছু ভুয়া সমন্বয়কের নেতৃত্বে প্রকাশিত এই কমিটির ঘোষণার সাথে তাদের প্রত্যক্ষ যোগসাজশ রয়েছে, যা আমাদের ক্ষোভ ও হতাশা আরও গভীর করেছে। আমরা রাজশাহীর ছাত্রসমাজ এই অবৈধ পকেট কমিটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি বাতিল করার জন্য কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল, আব্দুল হান্নান মাসুদ, হাসনাত আব্দুল্লাহ, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ভাইয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

একই সঙ্গে রাজশাহীর সর্বস্তরের ছাত্র সমাজ এই পকেট কমিটি সম্পূর্ণভাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছে এবং একইসাথে রাজশাহীর মাটিতে মাহিন সরকার ও সালাউদ্দিন আম্মারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।

এই আন্দোলন হাজারো শহীদের আত্মদানের ফসল, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার প্ল্যাটফর্ম নয়। রাজশাহীর ছাত্রজনতা জুলাই বিপ্লবের চেতনা রক্ষায় যে কোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী জেলা এবং মহানগরের এই কমিটি ঘোষণা করে। তার পর থেকেই এই কমিটি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ঢাবি-বুয়েটকে পেছনে ফেলে র‌্যাংকিংয়ে দেশসেরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমন্বয়ক মাহিন-আম্মারকে রাজশাহীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

আপডেট সময় ১২:২৮:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় মহানগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টের জলিল বিশ্বাসের মার্কেটের সামনে সংবাদ সম্মেলনে জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এসব অভিযোগ তোলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলা ও মহানগর শাখা কমিটিতে বিতর্কিতদের রাখার অভিযোগ তুলে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী জুবায়ের রশীদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হাজারও শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে মুক্তি লাভ করে। এই বিপ্লবে সারাদেশের মতো রাজশাহীর ছাত্রজনতাও বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে। ১০ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজশাহীর শিক্ষার্থী ও জনসাধারণ “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাজশাহী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়” ব্যানারে রাজপথে লড়াই করেছে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অকুতোভয় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

এই আন্দোলনের বীর সন্তান, রাজশাহীর গর্বিত দুই কৃতিসন্তান আলী রায়হান ও সাকিব আঞ্জুম নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও ক্ষোভের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি একটি স্বার্থান্বেষী মহল জুলাই বিপ্লবের প্রকৃত নায়কদের মাইনাস করে, ৫ আগস্টের পর সুবিধাভোগী কিছু অনুপ্রবেশকারীর মাধ্যমে প্রহসনের পকেট কমিটি গঠন করেছে।

গত ৩০ জানুয়রি “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী জেলা” এবং “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী মহানগর” নামে ঘোষিত এই কমিটিগুলোতে প্রকৃত আন্দোলনের সাহসী, বিপ্লবী এবং নির্ভরযোগ্য নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে আন্দোলনের চেতনাবিরোধী, বহিরাগত ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। আন্দোলনবিরোধী এসব ব্যক্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাজারে চাঁদাবাজি, ক্ষমতার দখল এবং সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত।

অভিযোগ উঠেছে, ফাতিন মাহাদী ও মাহিন সরকার মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই কমিটি গঠন করেছে। আরও উদ্বেগের বিষয়, এই কমিটির নেতৃত্বে এমন অনেককে রাখা হয়েছে, যারা সরাসরি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এমনকি আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদের ছাত্র সংগঠনের মূল নেতৃত্বও এই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে।

রাজশাহী মহানগরীতে আন্দোলনে সেসময় যারা রাজশাহীর বাইরে ছিল, আন্দোলনে সম্পৃক্তই ছিল না, তাদেরকেও কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রকৃত লড়াকু যোদ্ধাদের নাম সেখানে নেই। এটি সরাসরি জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অপমান এবং রাজশাহীর ত্যাগী ছাত্রজনতার সঙ্গে প্রতারণার শামিল।
এছাড়াও, একজন হত্যা মামলার অন্যতম আসামিকে এই কমিটির শীর্ষ পদে রাখা হয়েছে, যা এই কমিটির প্রকৃত উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দেয়। এরা আন্দোলনের চেতনা বিকৃত করে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থসিদ্ধির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার ও তার সহযোগী কিছু ভুয়া সমন্বয়কের নেতৃত্বে প্রকাশিত এই কমিটির ঘোষণার সাথে তাদের প্রত্যক্ষ যোগসাজশ রয়েছে, যা আমাদের ক্ষোভ ও হতাশা আরও গভীর করেছে। আমরা রাজশাহীর ছাত্রসমাজ এই অবৈধ পকেট কমিটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি বাতিল করার জন্য কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল, আব্দুল হান্নান মাসুদ, হাসনাত আব্দুল্লাহ, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ভাইয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

একই সঙ্গে রাজশাহীর সর্বস্তরের ছাত্র সমাজ এই পকেট কমিটি সম্পূর্ণভাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছে এবং একইসাথে রাজশাহীর মাটিতে মাহিন সরকার ও সালাউদ্দিন আম্মারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।

এই আন্দোলন হাজারো শহীদের আত্মদানের ফসল, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার প্ল্যাটফর্ম নয়। রাজশাহীর ছাত্রজনতা জুলাই বিপ্লবের চেতনা রক্ষায় যে কোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী জেলা এবং মহানগরের এই কমিটি ঘোষণা করে। তার পর থেকেই এই কমিটি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।