ঢাকা ০২:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে দুর্ঘটনা

মৃত্যুর মিছিল থামবে কবে?

সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক যেন এক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায়ই এই সড়কে ঘটে দুর্ঘটনা, যা প্রাণহানির পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রাকেও বিপর্যস্ত করে তুলছে। সড়কটিতে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। এর ফলে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। বিগত কয়েক বছরে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালে ডিসেম্বর মাসে রাজপুর নামক স্থানে খলাছড়া ইউনিয়নের কুদ্দুস চৌধুরী নামক এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের কটালপুর নামক স্থানে বাস খাদে পড়ে নিলাম্বরপুর গ্রামের ছয় বছর বয়সী শিশু তাসমিয়া বেগম নিহত হয়। এ দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০ জন আহত হন। ২০২১ সালে নভেম্বর মাসে হানিগ্রাম জামে মসজিদ রোডে এক শিশুর মৃত্যু ঘটে। ২০২২ সালের আগষ্ট মাসে বাসের ধাক্কায় আটগ্রামে লুৎফুর রহমান হাইস্কুল এন্ড কলেজের ফাতেমা আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়, এ দুর্ঘটনায় সাদিকা আক্তার নামে আরেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। ২০২২ সালে এপ্রিল মাসে আটগ্রাম-কালিগঞ্জ সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে জামুরাইল গ্রামের আব্দুল হামিদের স্ত্রী শারমিন রিমা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি এক শিশু সন্তানের জননী ছিলেন।

একই বছরের ২৭ অক্টোবর, ঈদগাহ বাজার নামক স্থানে বীরশ্রী ইউনিয়নের জুয়েল নামক এক যুবক গুরুতর আহত হন। প্রায় ১০ দিন পর ৫ নভেম্বর ঢাকায় একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ২৮ অক্টোবর, কলাকুটায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ইছামতি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী বাল্লা দেওয়ানচক গ্রামের মুক্তার হোসেন লাল ও সেনাপতিরচকগ্রামের শাহজাহান ইমন নিহত হন। ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর, এমসি কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ও জকিগঞ্জ টিভির জনপ্রিয় উপস্থাপক, রেদ্বওয়ান মাহমুদ চৌধুরী বাড়ি ফেরার পথে সড়কবাজার এলাকার ঈদগাহ সংলগ্ন স্থানে সিএনজি দুর্ঘটনায় নিহত হন। ২০২৩ সালের ২ মে, নানার বাড়ি থেকে ফেরার পথে সুলতানপুরের গুয়াবাড়ি রাস্তায় ট্রলির ধাক্কায় মাহফুজ আহমদ (৯) নামক এক শিশু মৃত্যুবরণ করে। এ ঘটনায় তার ভাই মাসরুর (৭) গুরুতর আহত হয়। একই বছর সেপ্টেম্বর মাসের মহিদপুর এলাকায় কানাইঘাটের মেহেদী ও রাহাদ নামের দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন।

২০২৩ সালে ঈদে বাড়ি ফেরার পথে আটগ্রাম স্টেশনের পশ্চিম পাশে নিহত হন কসকনকপুর গ্রামের রেজাউল করীম রেজা। ২০২৪ সালে এপ্রিল মাসে বারহাল ইউনিয়নের মহিদপুর এলাকায় মাদারখাল গ্রামের জাকারিয়া আহমদ (২১) ও আদিল আহমদ (২০) মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত হন। এ ঘটনায় মিলন আহমদ নামক আরেকজন গুরুতর আহত হন। একই মাসের ২৮ এপ্রিল বারঠাকুরী ইটভাটার সামনে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় বারঠাকুরী গ্রামের রেদোয়ান আহমদ (২৭) ও সোনাসার বাজারের ব্যবসায়ী মঞ্জুর আহমদ (২৬) ও দেলোয়ার আহমদ (৪০) নামে আরেকজন নিহত হন। ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, সড়কের বাজার এলাকায় গোটারগ্রামের দেলোয়ার হোসেন (২৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। চলতি বছরের ২৮ জুন, রামপুর যাত্রী ছাউনির সম্মুখে সাংবাদিক সাব্বির আহমদের ভাই শাহরিয়ার স্বপন (২৯) মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন। ১৬ জুলাই, আটগ্রাম-কালিগঞ্জ সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে মালিক নাহার মেমোরিয়াল একাডেমির শিক্ষার্থী মারজান আহমদ ও জাহাঙ্গীর আলম নিহত হন। একই দুর্ঘটনায় রেজাউল করিম সৌরভ নামক একজন গুরুতর আহত হন। গত ২৬ ডিসেম্বর, হাসিতলা এলাকায় পিল্লাকান্দি গ্রামের শাকিল আহমদ(১৭) নামক এক কিশোর নিহত হন। এ ঘটনায় শাহাদাত হোসেন নামক আরেকজন আহত হন। ২৯ ডিসেম্বর, গণিপুর কামালগঞ্জ হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবির আহমদ (১৪) বাসের ধাক্কায় নিহত হয়।

এসব ঘটনা ছাড়াও সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে, সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক যাত্রী আহত ও নিহত হয়েছেন। অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি ও ট্রাফিক আইন না মানার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিমত বিশিষ্টজনদের। প্রশাসনের কাছে দ্রুত দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সড়কটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ না দিলে, এ মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হতে পারে!

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

আন্দোলনকারীর বাবার নামে মামলা; অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে দুর্ঘটনা

মৃত্যুর মিছিল থামবে কবে?

আপডেট সময় ০৮:০২:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫

সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক যেন এক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায়ই এই সড়কে ঘটে দুর্ঘটনা, যা প্রাণহানির পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রাকেও বিপর্যস্ত করে তুলছে। সড়কটিতে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। এর ফলে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। বিগত কয়েক বছরে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালে ডিসেম্বর মাসে রাজপুর নামক স্থানে খলাছড়া ইউনিয়নের কুদ্দুস চৌধুরী নামক এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের কটালপুর নামক স্থানে বাস খাদে পড়ে নিলাম্বরপুর গ্রামের ছয় বছর বয়সী শিশু তাসমিয়া বেগম নিহত হয়। এ দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০ জন আহত হন। ২০২১ সালে নভেম্বর মাসে হানিগ্রাম জামে মসজিদ রোডে এক শিশুর মৃত্যু ঘটে। ২০২২ সালের আগষ্ট মাসে বাসের ধাক্কায় আটগ্রামে লুৎফুর রহমান হাইস্কুল এন্ড কলেজের ফাতেমা আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়, এ দুর্ঘটনায় সাদিকা আক্তার নামে আরেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। ২০২২ সালে এপ্রিল মাসে আটগ্রাম-কালিগঞ্জ সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে জামুরাইল গ্রামের আব্দুল হামিদের স্ত্রী শারমিন রিমা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি এক শিশু সন্তানের জননী ছিলেন।

একই বছরের ২৭ অক্টোবর, ঈদগাহ বাজার নামক স্থানে বীরশ্রী ইউনিয়নের জুয়েল নামক এক যুবক গুরুতর আহত হন। প্রায় ১০ দিন পর ৫ নভেম্বর ঢাকায় একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ২৮ অক্টোবর, কলাকুটায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ইছামতি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী বাল্লা দেওয়ানচক গ্রামের মুক্তার হোসেন লাল ও সেনাপতিরচকগ্রামের শাহজাহান ইমন নিহত হন। ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর, এমসি কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ও জকিগঞ্জ টিভির জনপ্রিয় উপস্থাপক, রেদ্বওয়ান মাহমুদ চৌধুরী বাড়ি ফেরার পথে সড়কবাজার এলাকার ঈদগাহ সংলগ্ন স্থানে সিএনজি দুর্ঘটনায় নিহত হন। ২০২৩ সালের ২ মে, নানার বাড়ি থেকে ফেরার পথে সুলতানপুরের গুয়াবাড়ি রাস্তায় ট্রলির ধাক্কায় মাহফুজ আহমদ (৯) নামক এক শিশু মৃত্যুবরণ করে। এ ঘটনায় তার ভাই মাসরুর (৭) গুরুতর আহত হয়। একই বছর সেপ্টেম্বর মাসের মহিদপুর এলাকায় কানাইঘাটের মেহেদী ও রাহাদ নামের দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন।

২০২৩ সালে ঈদে বাড়ি ফেরার পথে আটগ্রাম স্টেশনের পশ্চিম পাশে নিহত হন কসকনকপুর গ্রামের রেজাউল করীম রেজা। ২০২৪ সালে এপ্রিল মাসে বারহাল ইউনিয়নের মহিদপুর এলাকায় মাদারখাল গ্রামের জাকারিয়া আহমদ (২১) ও আদিল আহমদ (২০) মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত হন। এ ঘটনায় মিলন আহমদ নামক আরেকজন গুরুতর আহত হন। একই মাসের ২৮ এপ্রিল বারঠাকুরী ইটভাটার সামনে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় বারঠাকুরী গ্রামের রেদোয়ান আহমদ (২৭) ও সোনাসার বাজারের ব্যবসায়ী মঞ্জুর আহমদ (২৬) ও দেলোয়ার আহমদ (৪০) নামে আরেকজন নিহত হন। ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, সড়কের বাজার এলাকায় গোটারগ্রামের দেলোয়ার হোসেন (২৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। চলতি বছরের ২৮ জুন, রামপুর যাত্রী ছাউনির সম্মুখে সাংবাদিক সাব্বির আহমদের ভাই শাহরিয়ার স্বপন (২৯) মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন। ১৬ জুলাই, আটগ্রাম-কালিগঞ্জ সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে মালিক নাহার মেমোরিয়াল একাডেমির শিক্ষার্থী মারজান আহমদ ও জাহাঙ্গীর আলম নিহত হন। একই দুর্ঘটনায় রেজাউল করিম সৌরভ নামক একজন গুরুতর আহত হন। গত ২৬ ডিসেম্বর, হাসিতলা এলাকায় পিল্লাকান্দি গ্রামের শাকিল আহমদ(১৭) নামক এক কিশোর নিহত হন। এ ঘটনায় শাহাদাত হোসেন নামক আরেকজন আহত হন। ২৯ ডিসেম্বর, গণিপুর কামালগঞ্জ হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবির আহমদ (১৪) বাসের ধাক্কায় নিহত হয়।

এসব ঘটনা ছাড়াও সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে, সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক যাত্রী আহত ও নিহত হয়েছেন। অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি ও ট্রাফিক আইন না মানার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিমত বিশিষ্টজনদের। প্রশাসনের কাছে দ্রুত দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সড়কটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ না দিলে, এ মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হতে পারে!