ঢাকা ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কায়কোবাদ, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি

কায়কোবাদ
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি
(২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৫৭-২১ জুলাই ১৯৫১)
মাহ্মুদুন্নবী জ্যোতি

“কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।”
অতুলনীয় মধুর আযানের ধ্বনি! অপূর্ব সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। চিরায়ত ভালো লাগা এবং ভালোবাসার আবেশ যেন স্বর্গ থেকে এসে হৃদয় আন্দোলিত করে যায়। সেই বিখ্যাত “আযান” কবিতার সার্থক কবি মহাকবি কায়কোবাদ। কেউ কেউ বলে থাকেন মুন্সী কায়কোবাদ। অবশ্য কবির প্রকৃত নাম মুহাম্মদ কাজেম আল কোরেশী।
কায়কোবাদ বাংলা ভাষার উল্লেখযোগ্য কবি যিনি মহাকবি হিসেবে পরিচিত। মীর মশাররফ, কায়কোবাদ, মোজাম্মেল হকের মধ্যে কায়কোবাদই হচ্ছেন সর্বতোভাবে একজন কবি। কাব্যের আদর্শ ও প্রেরণা তাঁর মধ্যেই লীলাময় হয়ে ওঠে। সেজন্য একথা বেশ জোরের সঙ্গে বলা যায় যে কায়কোবাদই হচ্ছেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি।

জন্ম ও শিক্ষা:
কায়কোবাদ ১৮৫৭ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার অধীনে আগলা-পূর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শাহামাতুল্লাহ আল কোরেশী ছিলেন ঢাকা জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী। কায়কোবাদ সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে অধ্যয়ন করেন। পিতার অকালমৃত্যুর পর তিনি ঢাকা মাদ্রাসাতে (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) ভর্তি হন এবং প্রবেশিকা পরীক্ষা পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষা না দিয়ে পোস্টমাস্টারের চাকরি নিয়ে স্থানীয় গ্রামে ফিরে আসেন। যেখানে তিনি অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

সাহিত্যকর্ম:
মহাকবি কায়কোবাদের কবিতা বিচিত্রমুখী। তিনি যেমন তাঁর কবিতায় দেশের কথা বলেছেন, ভাষার কথা বলেছেন তেমনি বলেছেন জীবন ঘনিষ্ঠতার কথা। মানব জীবনের পরতে পরতে লুকায়িত আছে হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, সুখ-অসুখ। তিনি অনেক গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন। তাঁর রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম : বিরহ বিলাপ (১৮৭০)। এরপর তিনি একে একে আরও অনেক কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। যেমন: কুসুম কানন (১৮৭৩), অশ্রুমালা (১৮৯৬); মহাশ্মশান (১৯০৪), শিব-মন্দির বা জীবন্ত সমাধি (১৯২১), অমিয় ধারা (১৯২৩), শ্মশানভষ্ম (১৯২৪), মহররম শরীফ (১৯৩৩), ‘মহররম শরীফ’ কবির মহাকাব্যোচিত বিপুল আয়তনের একটি কাহিনী কাব্য। শ্মশান ভসন (১৯৩৮), প্রেমের বাণী (১৯৭০) প্রেম পারিজাত (১৯৭০) ইত্যাদি।
কায়কোবাদ ১৯৩২ সালে কলকাতাতে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনের প্রধান অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বাঙালি মুসলিম কবিদের মধ্যে প্রথম সনেট রচয়িতা।

পুরস্কার ও সম্মাননা:
বাংলা মহাকাব্যের অস্তোন্মুখ এবং গীতিকবিতার স্বর্ণযুগে মহাকবি কায়কোবাদ মুসলিমদের গৌরবময় ইতিহাস থেকে কাহিনি নিয়ে ‘মহাশ্মশান’ মহাকাব্য রচনা করে যে দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছেন তা তাকে বাংলা সাহিত্যের গৌরবময় আসনে স্থান করে দিয়েছে। বাংলা কাব্য সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯২৫ সালে নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ তাকে ‘কাব্যভূষণ’, ‘বিদ্যাভূষণ’ ও ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

মৃত্যু:
মহাকবি কায়কোবাদ ১৯৫১ সালের ২১ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

কায়কোবাদের কবিতাগুচ্ছ:

আযান

কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
কি মধুর আযানের ধ্বনি!
আমি তো পাগল হয়ে সে মধুর তানে,
কি যে এক আকর্ষণে, ছুটে যাই মুগ্ধমনে
কি নিশীথে, কি দিবসে মসজিদের পানে।
হৃদয়ের তারে তারে, প্রাণের শোণিত-ধারে,
কি যে এক ঢেউ উঠে ভক্তির তুফানে-
কত সুধা আছে সেই মধুর আযানে।
নদী ও পাখির গানে তারই প্রতিধ্বনি।
ভ্রমরের গুণ-গানে সেই সুর আসে কানে
কি এক আবেশে মুগ্ধ নিখিল ধরণী।
ভূধরে, সাগরে জলে নির্ঝরণী কলকলে,
আমি যেন শুনি সেই আযানের ধ্বনি।
আহা যবে সেই সুর সুমধুর স্বরে,
ভাসে দূরে সায়াহ্নের নিথর অম্বরে,
প্রাণ করে আনচান, কি মধুর সে আযান,
তারি প্রতিধ্বনি শুনি আত্মার ভিতরে।
নীরব নিঝুম ধরা, বিশ্বে যেন সবই মরা,
এতটুকু শব্দ যবে নাহি কোন স্থানে,
মুয়াযযিন উচ্চৈঃস্বরে দাঁড়ায়ে মিনার ‘পরে
কি সুধা ছড়িয়ে দেয় উষার আযানে!
জাগাইতে মোহমুদ্ধ মানব সন্তানে।
আহা কি মধুর ওই আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।

দেশের বাণী

কে আর বুঝিবে হায় এ দেশের বাণী?
এ দেশের লোক যারা,
সকলইতো গেছে মারা,
আছে শুধু কতগুলি শৃগাল শকুনি!
সে কথা ভাবিতে হায়
এ প্রাণ ফেটে যায়,
হৃদয় ছাপিয়ে উঠে- চোখ ভরা পানি।
কে আর বুঝিবে হায় এ দেশের বাণী!
এ দেশের লোক যত
বিলাস ব্যসনে রত
এ দেশের দুঃখ কিছু নাহি বুঝে তারা।
দেশ গেল ছারেখারে,
এ কথা বলিব কারে?
ভেবে ভেবে তবু মোর হয়ে গেছে সারা!
প্রাণভরা হাহাকার
চোখ ভরা অশ্রুধার,
এ হৃদি যে হয়ে গেছে মরুভূমি-পারা!

সুখ

সুখ সুখ’ বলে তুমি কেন কর হা-হুতাশ,
সুখ ত পাবে না কোথা, বৃথা সে সুখের আশ!
পথিক মরুভূ মাঝে খুঁজিয়া বেড়ায় জল,
জল ত মিলে না সেথা, মরীচিকা করে ছল!
তেমনি এ বিশ্ব মাঝে, সুখ ত পাবে না তুমি,
মরীচিকা প্রায় সুখ, এ বিশ্ব যে মরুভূমি!
ধন রত্ন সুখৈশ্বর্য কিছুতেই সুখ নাই,
সুখ পর-উপকারে, তারি মাঝে খোঁজ ভাই!
‘আমিত্ব’কে বলি দিয়া স্বার্থ ত্যাগ কর যদি,
পরের হিতের জন্য ভাব যদি নিরবধি!
নিজ সুখ ভুলে গিয়ে ভাবিলে পরের কথা,
মুছালে পরের অশ্রু – ঘুচালে পরের ব্যথা!
আপনাকে বিলাইয়া দীনদুঃখীদের মাঝে,
বিদূরিলে পর দূঃখ সকালে বিকালে সাঁঝে!
তবেই পাইবে সুখ আত্মার ভিতরে তুমি,
যা রুপিবে- তাই পাবে, সংসার যে কর্মভূমি!

আরো পড়ুন : বহুভাষাবিদ ও দার্শনিক ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

কায়কোবাদ, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি

আপডেট সময় ০৪:৩৩:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪

কায়কোবাদ
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি
(২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৫৭-২১ জুলাই ১৯৫১)
মাহ্মুদুন্নবী জ্যোতি

“কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।”
অতুলনীয় মধুর আযানের ধ্বনি! অপূর্ব সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। চিরায়ত ভালো লাগা এবং ভালোবাসার আবেশ যেন স্বর্গ থেকে এসে হৃদয় আন্দোলিত করে যায়। সেই বিখ্যাত “আযান” কবিতার সার্থক কবি মহাকবি কায়কোবাদ। কেউ কেউ বলে থাকেন মুন্সী কায়কোবাদ। অবশ্য কবির প্রকৃত নাম মুহাম্মদ কাজেম আল কোরেশী।
কায়কোবাদ বাংলা ভাষার উল্লেখযোগ্য কবি যিনি মহাকবি হিসেবে পরিচিত। মীর মশাররফ, কায়কোবাদ, মোজাম্মেল হকের মধ্যে কায়কোবাদই হচ্ছেন সর্বতোভাবে একজন কবি। কাব্যের আদর্শ ও প্রেরণা তাঁর মধ্যেই লীলাময় হয়ে ওঠে। সেজন্য একথা বেশ জোরের সঙ্গে বলা যায় যে কায়কোবাদই হচ্ছেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি।

জন্ম ও শিক্ষা:
কায়কোবাদ ১৮৫৭ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার অধীনে আগলা-পূর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শাহামাতুল্লাহ আল কোরেশী ছিলেন ঢাকা জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী। কায়কোবাদ সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে অধ্যয়ন করেন। পিতার অকালমৃত্যুর পর তিনি ঢাকা মাদ্রাসাতে (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) ভর্তি হন এবং প্রবেশিকা পরীক্ষা পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষা না দিয়ে পোস্টমাস্টারের চাকরি নিয়ে স্থানীয় গ্রামে ফিরে আসেন। যেখানে তিনি অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

সাহিত্যকর্ম:
মহাকবি কায়কোবাদের কবিতা বিচিত্রমুখী। তিনি যেমন তাঁর কবিতায় দেশের কথা বলেছেন, ভাষার কথা বলেছেন তেমনি বলেছেন জীবন ঘনিষ্ঠতার কথা। মানব জীবনের পরতে পরতে লুকায়িত আছে হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, সুখ-অসুখ। তিনি অনেক গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন। তাঁর রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম : বিরহ বিলাপ (১৮৭০)। এরপর তিনি একে একে আরও অনেক কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। যেমন: কুসুম কানন (১৮৭৩), অশ্রুমালা (১৮৯৬); মহাশ্মশান (১৯০৪), শিব-মন্দির বা জীবন্ত সমাধি (১৯২১), অমিয় ধারা (১৯২৩), শ্মশানভষ্ম (১৯২৪), মহররম শরীফ (১৯৩৩), ‘মহররম শরীফ’ কবির মহাকাব্যোচিত বিপুল আয়তনের একটি কাহিনী কাব্য। শ্মশান ভসন (১৯৩৮), প্রেমের বাণী (১৯৭০) প্রেম পারিজাত (১৯৭০) ইত্যাদি।
কায়কোবাদ ১৯৩২ সালে কলকাতাতে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনের প্রধান অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বাঙালি মুসলিম কবিদের মধ্যে প্রথম সনেট রচয়িতা।

পুরস্কার ও সম্মাননা:
বাংলা মহাকাব্যের অস্তোন্মুখ এবং গীতিকবিতার স্বর্ণযুগে মহাকবি কায়কোবাদ মুসলিমদের গৌরবময় ইতিহাস থেকে কাহিনি নিয়ে ‘মহাশ্মশান’ মহাকাব্য রচনা করে যে দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছেন তা তাকে বাংলা সাহিত্যের গৌরবময় আসনে স্থান করে দিয়েছে। বাংলা কাব্য সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯২৫ সালে নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ তাকে ‘কাব্যভূষণ’, ‘বিদ্যাভূষণ’ ও ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

মৃত্যু:
মহাকবি কায়কোবাদ ১৯৫১ সালের ২১ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

কায়কোবাদের কবিতাগুচ্ছ:

আযান

কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
কি মধুর আযানের ধ্বনি!
আমি তো পাগল হয়ে সে মধুর তানে,
কি যে এক আকর্ষণে, ছুটে যাই মুগ্ধমনে
কি নিশীথে, কি দিবসে মসজিদের পানে।
হৃদয়ের তারে তারে, প্রাণের শোণিত-ধারে,
কি যে এক ঢেউ উঠে ভক্তির তুফানে-
কত সুধা আছে সেই মধুর আযানে।
নদী ও পাখির গানে তারই প্রতিধ্বনি।
ভ্রমরের গুণ-গানে সেই সুর আসে কানে
কি এক আবেশে মুগ্ধ নিখিল ধরণী।
ভূধরে, সাগরে জলে নির্ঝরণী কলকলে,
আমি যেন শুনি সেই আযানের ধ্বনি।
আহা যবে সেই সুর সুমধুর স্বরে,
ভাসে দূরে সায়াহ্নের নিথর অম্বরে,
প্রাণ করে আনচান, কি মধুর সে আযান,
তারি প্রতিধ্বনি শুনি আত্মার ভিতরে।
নীরব নিঝুম ধরা, বিশ্বে যেন সবই মরা,
এতটুকু শব্দ যবে নাহি কোন স্থানে,
মুয়াযযিন উচ্চৈঃস্বরে দাঁড়ায়ে মিনার ‘পরে
কি সুধা ছড়িয়ে দেয় উষার আযানে!
জাগাইতে মোহমুদ্ধ মানব সন্তানে।
আহা কি মধুর ওই আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।

দেশের বাণী

কে আর বুঝিবে হায় এ দেশের বাণী?
এ দেশের লোক যারা,
সকলইতো গেছে মারা,
আছে শুধু কতগুলি শৃগাল শকুনি!
সে কথা ভাবিতে হায়
এ প্রাণ ফেটে যায়,
হৃদয় ছাপিয়ে উঠে- চোখ ভরা পানি।
কে আর বুঝিবে হায় এ দেশের বাণী!
এ দেশের লোক যত
বিলাস ব্যসনে রত
এ দেশের দুঃখ কিছু নাহি বুঝে তারা।
দেশ গেল ছারেখারে,
এ কথা বলিব কারে?
ভেবে ভেবে তবু মোর হয়ে গেছে সারা!
প্রাণভরা হাহাকার
চোখ ভরা অশ্রুধার,
এ হৃদি যে হয়ে গেছে মরুভূমি-পারা!

সুখ

সুখ সুখ’ বলে তুমি কেন কর হা-হুতাশ,
সুখ ত পাবে না কোথা, বৃথা সে সুখের আশ!
পথিক মরুভূ মাঝে খুঁজিয়া বেড়ায় জল,
জল ত মিলে না সেথা, মরীচিকা করে ছল!
তেমনি এ বিশ্ব মাঝে, সুখ ত পাবে না তুমি,
মরীচিকা প্রায় সুখ, এ বিশ্ব যে মরুভূমি!
ধন রত্ন সুখৈশ্বর্য কিছুতেই সুখ নাই,
সুখ পর-উপকারে, তারি মাঝে খোঁজ ভাই!
‘আমিত্ব’কে বলি দিয়া স্বার্থ ত্যাগ কর যদি,
পরের হিতের জন্য ভাব যদি নিরবধি!
নিজ সুখ ভুলে গিয়ে ভাবিলে পরের কথা,
মুছালে পরের অশ্রু – ঘুচালে পরের ব্যথা!
আপনাকে বিলাইয়া দীনদুঃখীদের মাঝে,
বিদূরিলে পর দূঃখ সকালে বিকালে সাঁঝে!
তবেই পাইবে সুখ আত্মার ভিতরে তুমি,
যা রুপিবে- তাই পাবে, সংসার যে কর্মভূমি!

আরো পড়ুন : বহুভাষাবিদ ও দার্শনিক ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ