সবশেষ নিয়োগ পাওয়া তিন উপদেষ্টার মধ্যে দুইজনের পদত্যাগ দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা ৷ এই দুইজন উপদেষ্টা হলেন, শিল্পগোষ্ঠী আকিজ-বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিন এবং চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী৷
এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে দেশের বাইরে থাকা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেশে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন৷
‘ফারুকীকে কোনোভাবেই মেনে নেব না’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘‘৮ আগস্ট যখন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয় তখন প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার শর্ত হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি শর্ত দিয়েছিলেন যে, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের তিনি তার পছন্দ অনুযায়ী নেবেন৷ কিন্তু তাদের নিয়ে কোনো সমস্যা হলে তখন সেটা দেখা হবে৷ ফলে উপদেষ্টাদের তার পছন্দেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিলো৷ আমাদের পক্ষ থেকে ছিলো৷ সেখান থেকেও তিনি নিয়েছেন৷ কিন্তু পরে যে দুই দফা উপদেষ্টা নেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি আমাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শই করেননি৷”
আরেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ছাত্ররাই তাকে নিয়োগ দিয়েছে৷ কিন্তু আমাদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই তিনি সর্বশেষ উপদেষ্টাদের নিয়োগ দিয়েছেন৷ এমনকি সরকারে থাকা আমাদের তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি, তারাও আমাদের সঙ্গে এনিয়ে কোনো কথা বলেননি৷”
তিনি বলেন, ‘‘সেখ বশির উদ্দিন এবং মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তারা দুইজনই ফ্যাসিবাদের সহযোগী৷ আর একজনের বিরুদ্ধে তো মামলাই আছে৷ আমরা দুইজনেরই অপসারণ চাই৷ অপসারণ করা না হলে আমরা চূড়ান্ত অ্যাকশনে যাবো৷”
আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘‘সেখ বশির উদ্দিন নিয়ে আমাদের তেমন কোনো আপত্তি না থাকলেও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে তো আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না৷ কারণ, তিনি মুজিববাদের সমর্থক৷ তাকে ক্ষমা চাইতে হবে৷ তাদের নিয়োগ দেয়া নিয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি৷”
তার কথা, ‘‘সরকারের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব বাড়ছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না৷ তবে যোগাযোগ কমছে, যোগাযোগ কম হচ্ছে৷ এটা দিয়ে সরকার কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে কিনা তা আমরা বোঝার চেষ্টা করছি৷ সেরকম কিছু হলে আমরা চূড়ান্ত অ্যাকশনে যাবো৷”
আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের ব্যাপারে ড. ইউনূসসহ উপদেষ্টা পরিষদ একমত ছিলো৷ রাজনৈতিক ঐক্যমতের দরকার ছিলো৷ সেটা না হওয়ায় রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করেননি৷ কিন্তু এই নতুন দুই উপদেষ্টার ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐক্যমত আছে৷ প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলে সমস্যার সমাধান হবে আশা করছি৷”
তিনি বলেন, ‘‘আসলে সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন৷ তারা প্রতি সপ্তাহে কী করছেন তা জাতিকে জানাতে হবে৷ আমাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে কিনা সেটা বিষয় নয়৷ তারা জাতির কাছে জবাবদিহিতা করলেই হবে৷”
‘নির্বাচন ও সংস্কার দেরি হয়ে যাচ্ছে’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘‘বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর কথায় উপদেষ্টা নিয়োগ বা সরকার পরিচালনা অনাকাঙ্খিত৷ রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে সরকার গঠন করা দরকার ছিলো৷ তাদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে সরকার পরিচালনা করা দরকার৷”
তিনি বলেন, ‘‘এখন সরকার কে চালায়, কারা উপদেষ্টা নিয়োগ করছেন, কীভাবে চলছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না৷ পুরো তালগোল পাকিয়ে ফেলা হয়েছে৷ এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে৷”
‘‘ইউনূস সাহেব শুরুতে ছাত্ররা তাকে নিয়োগ দিয়েছে বলে ভুল করেছেন৷ ফলে ছাত্রদের একটা বাড়তি চাপ দেয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে৷ আবার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে একজনকে দেশের বাইরে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন৷ এইসব করে পরিস্থিতি খারাপ করা হয়েছে৷ মূল কাজ নির্বাচন ও সংস্কার দেরি হয়ে যাচ্ছে,” বলেন রুহিন হোসেন প্রিন্স৷
‘অযথা সময় পার করা হচ্ছে’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুসহ এখন দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের ইস্যু তুলে আসলে অযথা সময় পার করা হচ্ছে৷ প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দেয়া সরকারের কাজ৷ তবে কোনো নিয়োগে অস্বচ্ছতা থাকলে তা কারেকশন করতে হবে৷”
‘‘কোনো পক্ষের হয়ে নয়, সরকারকে রাজনৈতিক দলসহ সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কাজ করতে হবে৷ তারা সেটা তেমন করছে না৷ আমরা চাই না এই সরকার ব্যর্থ হোক৷ ফলে তাদের এখন আলাপ-আলোচনা বাড়াতে হবে৷”