অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শুল্ক সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চিঠিতে বাণিজ্য ঘাটতি নিরসনে আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও ১৩ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের কাছেও ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন শুল্ক কার্যকরের চিঠি পাঠিয়েছেন।
৯০ দিনের স্থগিতাদেশের পর আমদানিকৃত পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তারা বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাবেন।
স্থানীয় সময় সোমবার (৭ জুলাই) ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের নেতাদের উদ্দেশ্যে পাঠানো চিঠি প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি তাদের সর্বশেষ শুল্ক পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি আরও বলেন, “আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে এই হার উপরে বা নিচে পরিবর্তিত হতে পারে।”
প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা ট্রাম্পের চিঠি হুবহু বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করা হলো-
দ্য হোয়াইট হাউস
ওয়াশিংটন
জুলাই ৭, ২০২৫
মাননীয়
মুহাম্মদ ইউনূস
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকা
প্রিয় জনাব ইউনূস,
এই চিঠিটি পাঠানো আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়, কারণ এটি আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কের শক্তি ও অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটায় এবং এই সত্য তুলে ধরে যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে, যদিও আমাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। তবুও, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা কেবলমাত্র আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য বাণিজ্যের ভিত্তিতে অগ্রসর হব। সুতরাং, আমরা আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের এই অসাধারণ বাজারে অংশগ্রহণ করতে, এবং আমাদের দীর্ঘদিনের আলোচনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, বাংলাদেশের শুল্ক, অশুল্ক নীতি এবং বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা থেকে উদ্ভূত দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য ঘাটতির অবসান এখন আবশ্যক। দুঃখজনকভাবে, আমাদের সম্পর্ক একে অপরের সমকক্ষ থেকে অনেক দূরে।
২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা বাংলাদেশের সকল পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যা খাতভিত্তিক শুল্কের বাইরে আলাদা হিসেবে গণ্য হবে। অন্য কোনো দেশে পাঠিয়ে ওই শুল্ক এড়াতে চাইলে, সেই পণ্যও উচ্চতর শুল্কের আওতাভুক্ত হবে।
আমরা অনুধাবন করি যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আমাদের দেশের সঙ্গে আপনার দেশের বাণিজ্য ঘাটতি দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে যদি বাংলাদেশ সরকার বা দেশীয় কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য তৈরি বা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না। আমরা দ্রুত পেশাদার এবং নিয়মিতভাবে অনুমোদন দিতে প্রস্তুত আছি—অর্থাৎ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সব সম্পন্ন করা সম্ভব।
যদি আপনারা শুল্ক বৃদ্ধি করেন, তাহলে যতটুকুই বাড়ান না কেন, তা আমাদের আরোপিত ৩৫ শতাংশের সঙ্গে যোগ হবে। দয়া করে বুঝুন, এই শুল্ক শুধুমাত্র বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে সৃষ্ট বাণিজ্য ঘাটতি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয়। এই ঘাটতি আমাদের অর্থনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।
আমরা আশা করি আপনাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। যদি আপনারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের দরজা আবার খুলতে চান এবং শুল্ক, অশুল্ক নীতি ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করেন, তাহলে আমরা এই শুল্ক হ্রাসের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করব। এসব শুল্ক ভবিষ্যতে সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে বাড়তে বা কমতেও পারে।
আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে ঘিরে আমরা কখনোই আপনাদের হতাশ করব না।
এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
শুভ কামনাসহ, আমি
বিনীত,
ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প