ঢাকা ০৯:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
আমরা যেন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি : ড. ইউনূস ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে যুগপৎ সঙ্গীদের সাথে আলোচনায় বিএনপি হামজার পর এবার আসছেন কানাডার সামিত সকল প্রকার অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের আহ্বান উপদেষ্টা আসিফের সরকারের মূল উদ্দেশ্য শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা : গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাকিস্তানের কাছেও হার বাংলাদেশের; কঠিন সমীকরণে বিশ্বকাপ ভাগ্য পারমাণবিক ইস্যুতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা হাসিনাসহ ১২ জনের নামে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারির আবেদন মুসলিম সংখ্যলঘুদের নিয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য ভারতের প্রত্যাখ্যান সংস্কার ও শেখ হাসিনার বিচারের আগে নির্বাচন নয় : গোলাম পরওয়ার

চিকিৎসা বাণিজ্যের প্রভাবে ব্যাপক হুমকির মুখে দেশের স্বাস্থ্য খাত

মোঃ সাইফুল ইসলাম, কোনাবাড়ী, গাজীপুর
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।যে জাতি যত স্বাস্থ্যবান সে তার জাতি তত শিক্ষিত, উন্নত ও সমৃদ্ধশালী। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্য সচেতন জাতিগুলো রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পৃথিবীতে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে।কিন্তু আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ হাটছে এর ঠিক উল্টো পথে। এদেশে চলছে ব্যাপকভাবে চিকিৎসার নামে প্রতারণামূলক প্রতিযোগিতা, স্বাস্থ্য সেবার নামে অস্বাস্থ্যকর অপ্রীতিকর অপপ্রয়াস। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে কবিরাজ বাড়ি কবিরাজ ঘর নামক প্রাইভেট দাওয়াখান, জার্মানের নাম দিয়ে ভুয়া হোমিও ঔষধালয়।এসবের রয়েছে আবার ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা,সাধারণ মানুষ চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রলোভিত হয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করে পকেট খালি করে ফেলছে, কিন্তু ফলাফল হচ্ছে শূন্য।

এসব অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতির কারণে মানব শরীরে ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। মানুষজন ধীরে ধীরে আজীবনের তরে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, এমনকি কোথাও কোথাও মৃত্যুর খবর শোনা গেছে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অনেক সময় মূল ধরার গণমাধ্যম সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে ব্যর্থ হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে তারা স্থানীয় প্রভাবশালী মানুষকে টাকার মাধ্যমে ম্যানেজ করে ফেলছে, এমনকি প্রশাসনের দিকেও আঙুল তুলছে কেউ কেউ।

এত গেল মূল ধারার বাইরের চিকিৎসার চিত্র। সমস্ত দেশের পাড়া,মহল্লা, গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা সমূহে গড়ে উঠেছে নানান নামধারী অনুমোদনহীন বেআইনি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যার সাথে জড়িত আছে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাবশালী মানুষজন এবং সহযোগিতা করে যাচ্ছে কিছু সংখ্যক বিপথগামী লোভী চিকিৎসক। যেগুলোতে চলছে চিকিৎসার নামে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। সাধারণ মানুষের থেকে টাকা আত্মসাৎ সহ চলছে অপচিকিৎসা। যাদের দৌরাত্বে সঠিক চিকিৎসক এবং চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। সাধারণ মানুষজন গোলকধাঁধার মধ্যে আটকে যাচ্ছে, কে সঠিক আর কে বেঠিক তা নির্ণয় করার পিছনে। দেশের বেশিরভাগ প্রান্তিক পর্যায়ের সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে দক্ষ চিকিৎসক, নার্স এবং আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদির ব্যাপক অভাব লক্ষ্য করা যায়। ইদানিং কালে এসব চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো শুধু রেফারেন্স সেন্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সেখানে চিকিৎসা নিতে গেলে তারা শুধু রেফারেন্স করে দেয় বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে কিংবা জেলা পর্যায়ের বা বিভাগীয় পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তিরা শেষ থাকে না। আধুনিক পৃথিবীতে বসে যেই ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার উপর বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে তা সচেতন মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে।

মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কিভাবে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করবে? এসবের উত্তর জানতে চাওয়া এখন সময়ের দাবি। বিসিএস ধারী সরকারি নিয়োগ প্রাপ্ত চিকিৎসকেরা দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে গিয়ে সুবিধা বঞ্চিত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে অপরেরাগতা প্রকাশ করছে। কারণ সেখানে নেই উন্নত জীবন মানের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। তারা যদি শহরে চাকরি করতে পারে,তাহলে ছুটির পরে প্রাইভেট ক্লিনিকে বসে রোগীর কাছ থেকে ভিজিট নিয়ে, ইনভেস্টিগেশন এর পার্সেন্টেজ নিয়ে বাড়তি ইনকামের ব্যবস্থা করতে পারে। এই যদি হয় সরকারি সুবিধাভোগী চিকিৎসকের চিকিৎসার অবস্থা তাহলে গ্রামের বসবাসকারী শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার কি হবে?

এছাড়াও রয়েছে নকল ও ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দৌড়ঝাপ। যাদের প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে অনেক খ্যাতিমান চিকিৎসক এবং চিকিৎসা কেন্দ্র। সুতরাং এত আলোচনা এবং সমালোচনার পরেও যদি সংশ্লিষ্ট সকল মহল থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি স্পর্শকাতর বিষয়ের উল্লেখিত সমস্যার উল্লেখযোগ্য সমাধান না করে, তাহলে দেশ ও জাতি চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হবে।

আরো পড়ুন : জনস্বার্থে বন্ধ করতে হবে অবৈধ ফার্মেসী

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

আমরা যেন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি : ড. ইউনূস

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

চিকিৎসা বাণিজ্যের প্রভাবে ব্যাপক হুমকির মুখে দেশের স্বাস্থ্য খাত

আপডেট সময় ১০:১৯:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

মোঃ সাইফুল ইসলাম, কোনাবাড়ী, গাজীপুর
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।যে জাতি যত স্বাস্থ্যবান সে তার জাতি তত শিক্ষিত, উন্নত ও সমৃদ্ধশালী। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্য সচেতন জাতিগুলো রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পৃথিবীতে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে।কিন্তু আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ হাটছে এর ঠিক উল্টো পথে। এদেশে চলছে ব্যাপকভাবে চিকিৎসার নামে প্রতারণামূলক প্রতিযোগিতা, স্বাস্থ্য সেবার নামে অস্বাস্থ্যকর অপ্রীতিকর অপপ্রয়াস। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে কবিরাজ বাড়ি কবিরাজ ঘর নামক প্রাইভেট দাওয়াখান, জার্মানের নাম দিয়ে ভুয়া হোমিও ঔষধালয়।এসবের রয়েছে আবার ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা,সাধারণ মানুষ চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রলোভিত হয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করে পকেট খালি করে ফেলছে, কিন্তু ফলাফল হচ্ছে শূন্য।

এসব অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতির কারণে মানব শরীরে ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। মানুষজন ধীরে ধীরে আজীবনের তরে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, এমনকি কোথাও কোথাও মৃত্যুর খবর শোনা গেছে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অনেক সময় মূল ধরার গণমাধ্যম সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে ব্যর্থ হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে তারা স্থানীয় প্রভাবশালী মানুষকে টাকার মাধ্যমে ম্যানেজ করে ফেলছে, এমনকি প্রশাসনের দিকেও আঙুল তুলছে কেউ কেউ।

এত গেল মূল ধারার বাইরের চিকিৎসার চিত্র। সমস্ত দেশের পাড়া,মহল্লা, গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা সমূহে গড়ে উঠেছে নানান নামধারী অনুমোদনহীন বেআইনি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যার সাথে জড়িত আছে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাবশালী মানুষজন এবং সহযোগিতা করে যাচ্ছে কিছু সংখ্যক বিপথগামী লোভী চিকিৎসক। যেগুলোতে চলছে চিকিৎসার নামে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। সাধারণ মানুষের থেকে টাকা আত্মসাৎ সহ চলছে অপচিকিৎসা। যাদের দৌরাত্বে সঠিক চিকিৎসক এবং চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। সাধারণ মানুষজন গোলকধাঁধার মধ্যে আটকে যাচ্ছে, কে সঠিক আর কে বেঠিক তা নির্ণয় করার পিছনে। দেশের বেশিরভাগ প্রান্তিক পর্যায়ের সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে দক্ষ চিকিৎসক, নার্স এবং আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদির ব্যাপক অভাব লক্ষ্য করা যায়। ইদানিং কালে এসব চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো শুধু রেফারেন্স সেন্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সেখানে চিকিৎসা নিতে গেলে তারা শুধু রেফারেন্স করে দেয় বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে কিংবা জেলা পর্যায়ের বা বিভাগীয় পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তিরা শেষ থাকে না। আধুনিক পৃথিবীতে বসে যেই ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার উপর বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে তা সচেতন মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে।

মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কিভাবে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করবে? এসবের উত্তর জানতে চাওয়া এখন সময়ের দাবি। বিসিএস ধারী সরকারি নিয়োগ প্রাপ্ত চিকিৎসকেরা দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে গিয়ে সুবিধা বঞ্চিত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে অপরেরাগতা প্রকাশ করছে। কারণ সেখানে নেই উন্নত জীবন মানের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। তারা যদি শহরে চাকরি করতে পারে,তাহলে ছুটির পরে প্রাইভেট ক্লিনিকে বসে রোগীর কাছ থেকে ভিজিট নিয়ে, ইনভেস্টিগেশন এর পার্সেন্টেজ নিয়ে বাড়তি ইনকামের ব্যবস্থা করতে পারে। এই যদি হয় সরকারি সুবিধাভোগী চিকিৎসকের চিকিৎসার অবস্থা তাহলে গ্রামের বসবাসকারী শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার কি হবে?

এছাড়াও রয়েছে নকল ও ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দৌড়ঝাপ। যাদের প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে অনেক খ্যাতিমান চিকিৎসক এবং চিকিৎসা কেন্দ্র। সুতরাং এত আলোচনা এবং সমালোচনার পরেও যদি সংশ্লিষ্ট সকল মহল থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি স্পর্শকাতর বিষয়ের উল্লেখিত সমস্যার উল্লেখযোগ্য সমাধান না করে, তাহলে দেশ ও জাতি চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হবে।

আরো পড়ুন : জনস্বার্থে বন্ধ করতে হবে অবৈধ ফার্মেসী