ঢাকা ০৯:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
আমরা যেন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি : ড. ইউনূস ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে যুগপৎ সঙ্গীদের সাথে আলোচনায় বিএনপি হামজার পর এবার আসছেন কানাডার সামিত সকল প্রকার অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের আহ্বান উপদেষ্টা আসিফের সরকারের মূল উদ্দেশ্য শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা : গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাকিস্তানের কাছেও হার বাংলাদেশের; কঠিন সমীকরণে বিশ্বকাপ ভাগ্য পারমাণবিক ইস্যুতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা হাসিনাসহ ১২ জনের নামে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারির আবেদন মুসলিম সংখ্যলঘুদের নিয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য ভারতের প্রত্যাখ্যান সংস্কার ও শেখ হাসিনার বিচারের আগে নির্বাচন নয় : গোলাম পরওয়ার

তরুণ প্রজন্মই গড়বে আগামীর বাংলাদেশ

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন

বাংলাদেশের তরুণদের রয়েছে গৌরবোজ্জল ইতিহাস। তাদের ইতিহাস হার না মানার দৃঢ় প্রত্যয়ে ভাস্বর। এদেশের তরুণদের হাত ধরেই বার বার সৃষ্টি হয়েছে মুক্তির বারতা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় কিংবা ৯০ এর স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলন, সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দুর্বার আন্দোলনে গত ৫ই আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন প্রবল পরাক্রমশালী, গণতন্ত্রের মোড়কে এক নায়কতন্ত্রের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। আওয়ামী সরকারের পতনের পর অস্থিতিশীল দেশে তরুণরাই পালন করেছেন ট্রাফিকের দায়িত্ব, করেছেন শহর পরিস্কার। দেয়ালে দেয়ালে ফুটিয়ে তুলেছেন আগামী বাংলাদেশের অনিন্দ্য সুন্দর গ্রাফিতি।

স্বৈরশাসকের পতনের তরুণদের উপর ন্যাস্ত হয়েছে দেশ বির্নিমাণের। তাদের হাত ধরে সমাজ ও রাষ্ট্রে ঘটছে পরিবর্তন, হচ্ছে উন্নয়ন। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে উন্নীত হতে বদ্ধপরিকর। আর এই স্বপ্ন এই প্রত্যাশা বাস্তবায়নে মূল শক্তি হিসেবে কাজ করছে যুবসমাজ। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ তরুণ, যার পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি ৩০ লাখ। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে তরুণরা। তরুণদের কৃষিতে অবদান ২৪ শতাংশ, শিল্পে ৩০ শতাংশ, এবং সেবাখাতে ৪৬ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ২১.০৯ শতাংশ, হাউসহোল্ডে ১৫.৫৯ শতাংশ, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩.৩৮ শতাংশ, এনজিওতে ০.৭৬ শতাংশ, ব্যক্তিগত পর্যায়ে ৫৮.২৪ শতাংশ এবং অন্যান্য সেক্টরে ০.৯৫ শতাংশ। দেশের ৫ কোটি ৩০ লাখ তরুণ সমাজকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তরিত করতে হবে। আর এর মাধ্যমে বিশ্বের বুকে উন্নত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন মতে, ২০৫০ সাল নাগাদ তরুণদের সংখ্যা ১০ থেকে ১৯ শতাংশে নেমে আসবে। তাই আজকের এই বিশাল কর্মক্ষম ও উদ্যমী তরুণ জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার এখনই সময়। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সাথে জাতীয় উন্নয়নের প্রত্যাশিত মাইলফলকগুলো ছোঁয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিগত এক দশক ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে ডিজিটালাইজেশন ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতাও অর্জন করেছে। শিক্ষা, তৈরী পোষাক, কৃষি, স্বাস্থ্য ও সেবাখাত ডিজিটালাইজড হচ্ছে। দ্রুতগতির ফাইভজি নেটওয়ার্ক অধ্যায়েও পদার্পণ করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’র সুবিধা ভোগ করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির বিবর্তনের ফলে যে পরিবর্তন সংঘটিত হচ্ছে যুবসমাজই প্রথম সেই পরিবর্তনকে গ্রহণ করছে। তথ্যপ্রযুক্তি যুবসমাজের কাছে খুবই জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় মাধ্যম। সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় যুবসমাজকে অন্তর্ভূক্তকরণে তথ্যপ্রযুক্তির জনপ্রিয় মাধ্যমকে ব্যবহার করা যায়। প্রযুক্তিতে তরুণদের সংযুক্তি বাড়লে তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে। এতে সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।

বর্তমান বিশ্ব বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। প্রতিটি আর্থ-সামাজিক ও প্রযুক্তিগত কাজে সারাবিশ্বে বিজ্ঞান এগিয়ে চলছে দুর্নিবার গতিতে। যুবক-তরুণদের বিজ্ঞানমনস্ক করা গেলে তাদের মধ্যে নব উদ্ভাবনী শক্তির সঞ্চার হবে এবং এতে করে দেশ এগিয়ে যাবে। তরুণরা নিজেদেরকে আগামীর জন্য প্রস্তুতকরণে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে। এর মধ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট কোর্স, বিভিন্ন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোর্স, কমিউনিকেশন দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, ডাটা অ্যানালাইসিস কোর্সসহ প্রয়োজনীয় কোর্সের মাধ্যমে নিজেদের যুগোপযোগী করে তৈরী করতে পারে।

প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও নতুন সৃজনশীল উদ্ভাবনী সামর্থ্যের মাধ্যমে তরুণরা উদ্যোক্তা হয়ে উঠছে। বর্তমানে অনেক তরুণ প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসায় নিয়োজিত হচ্ছে। এর মধ্যে অনলাইন মার্কেটিং, সফটওয়্যার ব্যবসা ও আউটসোর্সিং অন্যতম। বর্তমানে বিশ্ব তারুণ্যের সদস্য ১ কোটি ২০ লাখ, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, তরুণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ভারতে ৩৫ কোটি ৬০ লাখ, চীনে ২৬ কোটি ৯০ লাখ, ইন্দোনেশিয়ায় ৬ কোটি ৭০ লাখ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬ কোটি ৫০ লাখ, পাকিস্তানে ৫ কোটি ৯০ লাখ আর বাংলাদেশে রয়েছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় অর্ধেকের মতো যুবসমাজ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বাইরে আছে। আইএলও’র তথ্যমতে, করোনায় ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সসীমার মধ্যে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেকার হয়েছেন। বাংলাদেশে এই সময়ে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার তরুণ-তরুণী চাকরী হারিয়েছেন। আর্ন্তজাতিক শ্রমসংস্থার আঞ্চলিক প্রতিবেদন মতে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বাংলাদেশে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এ অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার।

ইউরোপীয় ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ২০১৬ সালের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশে শতকরা ৪৭ ভাগ গ্র্যাজুয়েট বেকার। আইএলও বলছে, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি, যা কয়েক বছরে দ্বিগুণ হয়ে ৬ কোটিতে দাঁড়াবে। যা মোট জনসংখ্যার ৩৯ দশমিক ৪০ শতাংশ হবে। বাংলাদেশের যুবসমাজের মধ্যে মোট তারুণ্যের ৩৮ শতাংশ শিক্ষায় নেই কিন্তু চাকরীও করছেন না এরূপ নারী রয়েছে ৯২.৬ শতাংশ আর পুরুষ রয়েছে ৭.৪ শতাংশ। শ্রমবাজারের বাইরে থাকা এই তরুণ সমাজকে শ্রমবাজারে যুক্ত করা গেলে দেশে চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতি সমান্তরাল গতিতে চলবে।

দেশে জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি তরুণ। প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি মানুষ (তরুণরা) শ্রমবাজারে অর্ন্তভূক্ত হচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির সমান্তরালে দ্রুতবেগে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এই ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রদীপ্ত শিখায় উদ্ভাসিত হয়ে তরুণরা দেশকে এগিয়ে নেবে। তরুণরা যে স্বপ্ন দেখে তা হলো সুন্দর ভবিষ্যতের প্রেরণায়। তরুণরা মেধা, মনন, কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের অফুরান স্পর্ধায় আকাশ ছোঁয়ার অনিন্দ্য স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবে। তারাই সারাদেশে ছড়িয়ে দিবে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির বারতা। সবার মাঝে বিলিয়ে দিবে মানবতা আর ভালোবাসার ফল্গুধারা।

আরো পড়ুন : যে কারণে পতন হয় স্বৈরশাসকের

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

আমরা যেন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি : ড. ইউনূস

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

তরুণ প্রজন্মই গড়বে আগামীর বাংলাদেশ

আপডেট সময় ১১:২৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন

বাংলাদেশের তরুণদের রয়েছে গৌরবোজ্জল ইতিহাস। তাদের ইতিহাস হার না মানার দৃঢ় প্রত্যয়ে ভাস্বর। এদেশের তরুণদের হাত ধরেই বার বার সৃষ্টি হয়েছে মুক্তির বারতা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় কিংবা ৯০ এর স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলন, সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দুর্বার আন্দোলনে গত ৫ই আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন প্রবল পরাক্রমশালী, গণতন্ত্রের মোড়কে এক নায়কতন্ত্রের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। আওয়ামী সরকারের পতনের পর অস্থিতিশীল দেশে তরুণরাই পালন করেছেন ট্রাফিকের দায়িত্ব, করেছেন শহর পরিস্কার। দেয়ালে দেয়ালে ফুটিয়ে তুলেছেন আগামী বাংলাদেশের অনিন্দ্য সুন্দর গ্রাফিতি।

স্বৈরশাসকের পতনের তরুণদের উপর ন্যাস্ত হয়েছে দেশ বির্নিমাণের। তাদের হাত ধরে সমাজ ও রাষ্ট্রে ঘটছে পরিবর্তন, হচ্ছে উন্নয়ন। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে উন্নীত হতে বদ্ধপরিকর। আর এই স্বপ্ন এই প্রত্যাশা বাস্তবায়নে মূল শক্তি হিসেবে কাজ করছে যুবসমাজ। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ তরুণ, যার পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি ৩০ লাখ। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে তরুণরা। তরুণদের কৃষিতে অবদান ২৪ শতাংশ, শিল্পে ৩০ শতাংশ, এবং সেবাখাতে ৪৬ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ২১.০৯ শতাংশ, হাউসহোল্ডে ১৫.৫৯ শতাংশ, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩.৩৮ শতাংশ, এনজিওতে ০.৭৬ শতাংশ, ব্যক্তিগত পর্যায়ে ৫৮.২৪ শতাংশ এবং অন্যান্য সেক্টরে ০.৯৫ শতাংশ। দেশের ৫ কোটি ৩০ লাখ তরুণ সমাজকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তরিত করতে হবে। আর এর মাধ্যমে বিশ্বের বুকে উন্নত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন মতে, ২০৫০ সাল নাগাদ তরুণদের সংখ্যা ১০ থেকে ১৯ শতাংশে নেমে আসবে। তাই আজকের এই বিশাল কর্মক্ষম ও উদ্যমী তরুণ জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার এখনই সময়। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সাথে জাতীয় উন্নয়নের প্রত্যাশিত মাইলফলকগুলো ছোঁয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিগত এক দশক ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে ডিজিটালাইজেশন ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতাও অর্জন করেছে। শিক্ষা, তৈরী পোষাক, কৃষি, স্বাস্থ্য ও সেবাখাত ডিজিটালাইজড হচ্ছে। দ্রুতগতির ফাইভজি নেটওয়ার্ক অধ্যায়েও পদার্পণ করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’র সুবিধা ভোগ করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির বিবর্তনের ফলে যে পরিবর্তন সংঘটিত হচ্ছে যুবসমাজই প্রথম সেই পরিবর্তনকে গ্রহণ করছে। তথ্যপ্রযুক্তি যুবসমাজের কাছে খুবই জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় মাধ্যম। সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় যুবসমাজকে অন্তর্ভূক্তকরণে তথ্যপ্রযুক্তির জনপ্রিয় মাধ্যমকে ব্যবহার করা যায়। প্রযুক্তিতে তরুণদের সংযুক্তি বাড়লে তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে। এতে সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।

বর্তমান বিশ্ব বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। প্রতিটি আর্থ-সামাজিক ও প্রযুক্তিগত কাজে সারাবিশ্বে বিজ্ঞান এগিয়ে চলছে দুর্নিবার গতিতে। যুবক-তরুণদের বিজ্ঞানমনস্ক করা গেলে তাদের মধ্যে নব উদ্ভাবনী শক্তির সঞ্চার হবে এবং এতে করে দেশ এগিয়ে যাবে। তরুণরা নিজেদেরকে আগামীর জন্য প্রস্তুতকরণে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে। এর মধ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট কোর্স, বিভিন্ন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোর্স, কমিউনিকেশন দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, ডাটা অ্যানালাইসিস কোর্সসহ প্রয়োজনীয় কোর্সের মাধ্যমে নিজেদের যুগোপযোগী করে তৈরী করতে পারে।

প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও নতুন সৃজনশীল উদ্ভাবনী সামর্থ্যের মাধ্যমে তরুণরা উদ্যোক্তা হয়ে উঠছে। বর্তমানে অনেক তরুণ প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসায় নিয়োজিত হচ্ছে। এর মধ্যে অনলাইন মার্কেটিং, সফটওয়্যার ব্যবসা ও আউটসোর্সিং অন্যতম। বর্তমানে বিশ্ব তারুণ্যের সদস্য ১ কোটি ২০ লাখ, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, তরুণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ভারতে ৩৫ কোটি ৬০ লাখ, চীনে ২৬ কোটি ৯০ লাখ, ইন্দোনেশিয়ায় ৬ কোটি ৭০ লাখ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬ কোটি ৫০ লাখ, পাকিস্তানে ৫ কোটি ৯০ লাখ আর বাংলাদেশে রয়েছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় অর্ধেকের মতো যুবসমাজ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বাইরে আছে। আইএলও’র তথ্যমতে, করোনায় ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সসীমার মধ্যে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেকার হয়েছেন। বাংলাদেশে এই সময়ে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার তরুণ-তরুণী চাকরী হারিয়েছেন। আর্ন্তজাতিক শ্রমসংস্থার আঞ্চলিক প্রতিবেদন মতে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বাংলাদেশে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এ অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার।

ইউরোপীয় ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ২০১৬ সালের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশে শতকরা ৪৭ ভাগ গ্র্যাজুয়েট বেকার। আইএলও বলছে, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি, যা কয়েক বছরে দ্বিগুণ হয়ে ৬ কোটিতে দাঁড়াবে। যা মোট জনসংখ্যার ৩৯ দশমিক ৪০ শতাংশ হবে। বাংলাদেশের যুবসমাজের মধ্যে মোট তারুণ্যের ৩৮ শতাংশ শিক্ষায় নেই কিন্তু চাকরীও করছেন না এরূপ নারী রয়েছে ৯২.৬ শতাংশ আর পুরুষ রয়েছে ৭.৪ শতাংশ। শ্রমবাজারের বাইরে থাকা এই তরুণ সমাজকে শ্রমবাজারে যুক্ত করা গেলে দেশে চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতি সমান্তরাল গতিতে চলবে।

দেশে জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি তরুণ। প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি মানুষ (তরুণরা) শ্রমবাজারে অর্ন্তভূক্ত হচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির সমান্তরালে দ্রুতবেগে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এই ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রদীপ্ত শিখায় উদ্ভাসিত হয়ে তরুণরা দেশকে এগিয়ে নেবে। তরুণরা যে স্বপ্ন দেখে তা হলো সুন্দর ভবিষ্যতের প্রেরণায়। তরুণরা মেধা, মনন, কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের অফুরান স্পর্ধায় আকাশ ছোঁয়ার অনিন্দ্য স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবে। তারাই সারাদেশে ছড়িয়ে দিবে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির বারতা। সবার মাঝে বিলিয়ে দিবে মানবতা আর ভালোবাসার ফল্গুধারা।

আরো পড়ুন : যে কারণে পতন হয় স্বৈরশাসকের