ঢাকা ১০:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টানা বৃষ্টিতে পানির নিচে কুমিল্লা শহর

মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতে কুমিল্লা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ডুবে গেছে নগরীর প্রধান সড়কসহ বহু অলিগলি। দুর্ভোগ বেড়েছে জনজীবনে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও নিম্নআয়ের মানুষের আয় রোজগার।

কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে বুধবার (৯ জুলাই) বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় ১২৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, সিটি করপোরেশনে সমনের সড়ক, বিসিক শিল্পনগরী এলাকা, জেলা স্কুল সড়ক, ঈদগাহ এলাকা, ছাতিপট্টি, দক্ষিণ চর্থা, কান্দিরপাড়-রাণীর বাজার সড়ক, ঠাকুরপাড়া, ছায়া বিতান ও শুভপুরসহ নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে নগরীতে বসবাসকারী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। জলমগ্ন সড়কে দুর্ভোগে পড়া নগরবাসী কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

কামরুল হাসান নামে এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমানে কুমিল্লা নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। এটা এক-দুই দিনের না, সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠারও আগের। প্রশ্ন হলো গত ১৪ বছরেও যে সমস্যা সিটি করপোরেশন সমাধান করতে পারেনি তা হলে এ করপোরেশন থেকে আমাদের লাভ কি? যে নগরীতে সামান্য বৃষ্টিতে হলেই দুর্ভোগে পড়তে হয় নগর বাসীকে। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।’

আব্দুল মালেক নামে ছায়া বিতান এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘এখনো সময় আছে কুমিল্লাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলুন। জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। দখল-দূষণে সংকুচিত নদী ও খাল দখলদার উচ্ছেদ ও পুনঃখননের উদ্যোগ গ্রহণ করুন। অন্যথায় নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।’

রিকশা চালক মনুমিয়া বলেন, ‘গত ২-৩ দিনের টানা বৃষ্টি আর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে আমাদের কামাই-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। সড়কে মানুষের আনাগোনাও কম। সারাদিনে রিকশার জমা খরচও উঠাতে পারছি না।’

কুমিল্লা শিল্পনগরীর বাসিন্দা আকাশ মণ্ডল বলেন, ‘বৃষ্টি আসুক বা না আসুক সারাবছর আমাদের সড়ক জ্বলমগ্ন থাকে। মালামাল আনা নেয়ায় শ্রমিকদের অনেক কষ্ট হয়। অন্তত এ সড়কে সিটি করপোরেশনের নজর দেয়া উচিত।’

সূত্র মতে, কুমিল্লায় জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আবাসনের বিস্তার। যত্রতত্র গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত দালানকোঠা। এরমধ্যে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং দখল ও দূষণে দিন দিন খালগুলো পরিণত হচ্ছে সরু নালায়। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে জনদুর্ভোগ দিন দিন চরম আকার ধারণ করেছে।’

কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হলে কুমিল্লা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ডুবে যায় নগরীর প্রধান লাকসাম রোড, জিলা স্কুল রোড, বিসিক শিল্পনগরী, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সমনের সড়ক, ঈদগাহ এলাকা, ছাতিপট্টি, চর্থা, কান্দিরপাড়-রাণীর বাজার সড়কসহ নগরীর উঁচু-নিচু বিভিন্ন অলিগলি। এতে কয়েকগুণ দুর্ভোগ বেড়ে যায় নগরবাসীর। সেই পানি নামতে ৭-৮ দিন সময় লেগে যায়।

পরিবেশ আন্দোলন কুমিল্লার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কোনো না কোনো মাধ্যমে বলেই যাচ্ছি। কাজের কিছুই হচ্ছে না। দুই-চার দিন লোক দেখানো কাজ হয়। বর্ষা চলে গেলে সিটি করপোরেশনের লোকজন ডুব দিয়ে পেলে। মানুষের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে কাজ করলে এর ফল পাওয়া যাবে। লোক দেখানো কাজে ফল নেই বলে মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘গত দুদিনের টানা বৃষ্টির কারণে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া যে সব খাল ও ড্রেনে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা হয়েছে সে সব স্থান চিহ্নিত করে সকাল থেকে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে আমি নিজেও রয়েছি।’

কুমিল্লা আবহাওয়া কর্মকর্তা ছৈয়দ আরিফুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার মাঝারি বৃষ্টি হলেও আজ থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঝড়ো হাওয়াও ছিল কোথাও কোথাও। আগামী দুই-একদিন একই অবস্থায় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

চার বিভাগে ভারি বৃষ্টিপাত

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

টানা বৃষ্টিতে পানির নিচে কুমিল্লা শহর

আপডেট সময় ০৬:০৫:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতে কুমিল্লা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ডুবে গেছে নগরীর প্রধান সড়কসহ বহু অলিগলি। দুর্ভোগ বেড়েছে জনজীবনে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও নিম্নআয়ের মানুষের আয় রোজগার।

কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে বুধবার (৯ জুলাই) বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় ১২৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, সিটি করপোরেশনে সমনের সড়ক, বিসিক শিল্পনগরী এলাকা, জেলা স্কুল সড়ক, ঈদগাহ এলাকা, ছাতিপট্টি, দক্ষিণ চর্থা, কান্দিরপাড়-রাণীর বাজার সড়ক, ঠাকুরপাড়া, ছায়া বিতান ও শুভপুরসহ নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে নগরীতে বসবাসকারী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। জলমগ্ন সড়কে দুর্ভোগে পড়া নগরবাসী কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

কামরুল হাসান নামে এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমানে কুমিল্লা নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। এটা এক-দুই দিনের না, সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠারও আগের। প্রশ্ন হলো গত ১৪ বছরেও যে সমস্যা সিটি করপোরেশন সমাধান করতে পারেনি তা হলে এ করপোরেশন থেকে আমাদের লাভ কি? যে নগরীতে সামান্য বৃষ্টিতে হলেই দুর্ভোগে পড়তে হয় নগর বাসীকে। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।’

আব্দুল মালেক নামে ছায়া বিতান এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘এখনো সময় আছে কুমিল্লাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলুন। জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। দখল-দূষণে সংকুচিত নদী ও খাল দখলদার উচ্ছেদ ও পুনঃখননের উদ্যোগ গ্রহণ করুন। অন্যথায় নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।’

রিকশা চালক মনুমিয়া বলেন, ‘গত ২-৩ দিনের টানা বৃষ্টি আর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে আমাদের কামাই-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। সড়কে মানুষের আনাগোনাও কম। সারাদিনে রিকশার জমা খরচও উঠাতে পারছি না।’

কুমিল্লা শিল্পনগরীর বাসিন্দা আকাশ মণ্ডল বলেন, ‘বৃষ্টি আসুক বা না আসুক সারাবছর আমাদের সড়ক জ্বলমগ্ন থাকে। মালামাল আনা নেয়ায় শ্রমিকদের অনেক কষ্ট হয়। অন্তত এ সড়কে সিটি করপোরেশনের নজর দেয়া উচিত।’

সূত্র মতে, কুমিল্লায় জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আবাসনের বিস্তার। যত্রতত্র গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত দালানকোঠা। এরমধ্যে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং দখল ও দূষণে দিন দিন খালগুলো পরিণত হচ্ছে সরু নালায়। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে জনদুর্ভোগ দিন দিন চরম আকার ধারণ করেছে।’

কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হলে কুমিল্লা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ডুবে যায় নগরীর প্রধান লাকসাম রোড, জিলা স্কুল রোড, বিসিক শিল্পনগরী, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সমনের সড়ক, ঈদগাহ এলাকা, ছাতিপট্টি, চর্থা, কান্দিরপাড়-রাণীর বাজার সড়কসহ নগরীর উঁচু-নিচু বিভিন্ন অলিগলি। এতে কয়েকগুণ দুর্ভোগ বেড়ে যায় নগরবাসীর। সেই পানি নামতে ৭-৮ দিন সময় লেগে যায়।

পরিবেশ আন্দোলন কুমিল্লার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কোনো না কোনো মাধ্যমে বলেই যাচ্ছি। কাজের কিছুই হচ্ছে না। দুই-চার দিন লোক দেখানো কাজ হয়। বর্ষা চলে গেলে সিটি করপোরেশনের লোকজন ডুব দিয়ে পেলে। মানুষের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে কাজ করলে এর ফল পাওয়া যাবে। লোক দেখানো কাজে ফল নেই বলে মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘গত দুদিনের টানা বৃষ্টির কারণে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া যে সব খাল ও ড্রেনে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা হয়েছে সে সব স্থান চিহ্নিত করে সকাল থেকে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে আমি নিজেও রয়েছি।’

কুমিল্লা আবহাওয়া কর্মকর্তা ছৈয়দ আরিফুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার মাঝারি বৃষ্টি হলেও আজ থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঝড়ো হাওয়াও ছিল কোথাও কোথাও। আগামী দুই-একদিন একই অবস্থায় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

চার বিভাগে ভারি বৃষ্টিপাত