পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা প্রতিরোধে প্রতিষ্ঠান প্রধানগণের সাথে উপজেলা প্রশাসনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের আয়োজনে বুধবার (০৯ জুলাই) সকাল ১০ টায় উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লুৎফুল কবির মোঃ কামরুল হাসান সভাপতিত্ব করেন এবং উপস্থাপকের ভুমিকা পালন করেন। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আরিফুজ্জামান প্রধান অতিথি ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মোঃ হুমায়ুন কবীর বিশেষ অতিথি হিসেবে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম, আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল কুদ্দশ, মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিমল চট্টপধ্যায়, মির্জাপুর মাওলানা আজিম উদ্দীন আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল মান্নান, দাড়খোর(ডুংডুংগী) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম, পানিশাইল সিপাহীপাড়া দাখিল মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট মোঃ হাফিজুল ইসলাম, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ ইউসুফ আলী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা বা উপজেলার চেয়ে আটোয়ারী উপজেলায় আত্মহত্যার প্রবনতা বেশী লক্ষ্য করা গেছে। তাই চলতি বছরের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ১০ জুলাই প্রকাশ হবে। পরীক্ষার ফলাফলে অকৃতকার্য হওয়া, সেই সঙ্গে কাঙ্খিত ফল না করায় মনের আবেগে বা লজ্জায় , কোন কিছু বুঝে ওঠার আগে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে বলে আমরা আতঙ্কিত। আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চেষ্টা করা অধিকাংশই কিশোরী।
প্রধান অতিথি বলেন, সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে অভিভাবকদের উচ্চাভিলাশ কিশোর কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ইদানিং পড়ালেখা ও ফলাফল নিয়ে আগের চাইতে অনেক বেশী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। পড়াশোনা এখন পরিণত হয়েছে অস্থির সামাজিক প্রতিযোগিতায়। যেখানে মা-বাবা সন্তানেরা পরীক্ষার ফলকে সামাজিক সম্মান রক্ষার হাতিয়ার বলে মনে করেন। তাদের আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে পরীক্ষায় ফেল করা কিংবা আশানুরূপ ফল না করাকে দায়ী করা হয়। অভিভাবকদের এই অতি প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব, সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে উচ্চাভিলাষের কারণেই বোর্ড পরীক্ষায় পাস না করায় কিশোর কিশোরীরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। পরিবারে কোনো সন্তান হতাশাগ্রস্ত থাকলে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষ অতিথি ডা. হুমায়ুন কবীর।
তিনি বলেন, খোজ নিলে দেখা যাবে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থীই হতাশা, মানসিক অশান্তি ও মানসিক অস্থিরতায় ভুগছে। তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারসহ সংগত নানা কারণে পূর্বের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ অবস্থা যেন অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রেমে ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ধরণের প্রবণতা বেড়েই চলেছে।
বক্তারা বলেন, কোনো শিক্ষার্থী যদি আত্মহত্যা করে বা আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে , তবে তা হবে সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য অত্যান্ত লজ্জার একটি বিষয়। কারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তাদের পরিবার সহ সমাজ, দেশ ও জাতি ভালো অনেক কিছু আশা করে। একজন শিক্ষার্থীকে স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আসতে তার অভিভাবকসহ ঐ শিক্ষার্থীকে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংগ্রাম করতে হয়। পাড়ি দিতে হয় অনেক দুর্গম পথ। এ বিষয়গুলো প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই উপলদ্ধি করা প্রয়োজন। তাদের স্মরণ রাখা উচিত, অনেক আশা-ভরসা নিয়ে তাদের বাবা-মা বা অভিভাবকেরা তাদের লেখাপড়া শেখান।
বক্তরা বলেন, শিক্ষার্থীসহ সবাইকে জীবনের গুরুত্ব ও মূল্য সম্পর্কে বুঝতে হবে। সবাইকে বুঝতে হবে যে জীবন একটাই এবং তা মহামূল্যবান। জীবন একবার হারালে তা আর কোন কিছুর বিনিময়েই ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। জীবনটাকে যদি সুন্দরভাবে সাজানো যায়, তাহলে জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ করা যায়। বিশেষ অতিথি বলেন,আত্মহত্যার চিন্তা ও আত্মহত্যার পথ পরিহার করে এখন থেকেই আমাদের জীবনটাকে ভালোভাবে ভালোবাসতে শিখি।
সভায় উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ সহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে উপজেলার চুচুলী বটতলী হাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীল চন্দ্র বর্মন গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুরে আকষ্মিকভাবে হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এক মিনিট দাড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।