ঢাকা ০২:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পীরগঞ্জে ভূয়া এতিম দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ভূয়া এতিম ও অসহায় নিবাসী দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে গোগর পাটুয়াপাড়া হাফিজিয়া এতিমখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। গত রোববার রাতে প্রতিষ্ঠানটিতে পরিদর্শনে গিয়ে ভুয়া নিবাসী দেখেয়ে সরকারি অর্থ তছরুপ করার সত্যতা পেয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিলে ঐ এতিমখানার ধরতা-কর্তা অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তা বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন।

পীরগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলাম জানান, নিয়মিত তদারকির অংশ হিসেবে রোববার রাতে তাকে সাথে নিয়ে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের গোগর পাটুয়াপাড়া হাফিজিয়া এতিমখানা পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান। এ সময় ২৬ জন নিবাসীকে এতিমখানায় উপস্থিত পাওয়া যায়। অথচ তাদের খাতা পত্র যাচাই করে দেখা যায় ওই এতিমখানায় কাগজে কলমে ১৭০ জন নিবাসী রয়েছে। এর মধ্যে ৬২ জন সরকারি ক্যাপিটেশন অনুদান ভোগ করছে। সরকারী বিধি অনুযায়ী ৬২ জন এতিম ও অসহায় সরকারি ক্যাপিটেশন সুবিধা পেতে হলে প্রতিষ্ঠানটিতে কমপক্ষে ১২৪ জন এতিম অসহায় নিবাসী থাকার কথা। সেখানে তারা পেয়েছেন ২৬ জন। যাদের অনেকেই আবার এতিম নয়। সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ভূয়া এতিম ও আসহায় নিবাসী দেখিয়ে সরকারি অর্থ লোপাট করা হচ্ছে এমন অভিযোগও ছিল তাদের কাছে। পরিদর্শনে গিয়ে তারা এর সত্যতা পেয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

সমাজসেবা দপ্তরের তথ্য মতে বর্তমানে ভুয়া এতিম ও অসহায় নিবাসী দেখিয়ে ঐ এতিমখানা কতৃপক্ষ মাসে ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা সরকারী কোষাগার থেকে উত্তোলন করছেন। বিধি অনুযায়ী যার সিংহ ভাগই তছরুপ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সেখানে তারা ঐ দূর্নীতি করে আসছেন।

এদিকে ভুয়া এতিম ও অসহায় নিবাসী দেখিয়ে সরকারী অর্থ আত্নসাত করার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পদ্যার অন্তরাল থেকে ঐ এতিমখানার পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সোহেল রানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন। রবিবার রাতে তিনি তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন-“উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে উপজেলা প্রশাসন ঐ এতিমখানা পরিদর্শন করেছেন”।

মুলত টাকা লুটপাটের বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই ফেসবুকে এমনটা লেখা হয়েছে বলে অভিমত উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলামের।

অভিযোগ রয়েছে, সোহেল রানা ঢাকা এবং চিটাগাংয়ে অবস্থান করেন এবং বিভিন্ন দলের বড় বড় নেতাদের সাথে তার সথ্যতা রয়েছে। তার মদদে এতিমখানাটিতে সরকারী অর্থ আত্নসাতের মহোৎসব চলছে। সোহেলের ভয়ে এলাকার লোকজন প্রতিষ্ঠানটির দূর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারছেন না।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সোহেল রানা’র কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তার হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনিয়ম রয়েছে। সেটা সংশোধন করার চেষ্টা করছেন। অনেকের আপত্তির কারণে ফেসবুক পোষ্টটি তিনি বর্তমানে হাইড করে রেখেছেন।

অভিযোগ বিষয়ে এতিমখানাটির মুহতামিম রবিউল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে- তিনি রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার সাথে সাথেই ফোন কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেন।

এতিমখানার সভাপতি মঈনুল হোসেন সোহাগ জানান, কর্নেল (অব:) সোহেলের বাবা এ হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানাটি করে গেছেন। এখন তারা কষ্ট করে প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। সেখানে কিছু সমস্যা তো আছেই। বিষয়টি শিথিলতার সহিত দেখার আহবান জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান বলেন, সমাজ সেবা কর্মকর্তার সাথে তিনি ঐ এতিমখানা পরিদর্শনে যান। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির দাপ্তরিক নিবাসীর সাথে বাস্তবতার বিশাল ফারাক দেখতে পান। সমাজসেবা দপ্তর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

জনপ্রিয় সংবাদ

এডিবি’র জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ জলবায়ু সংকটকে তীব্র করছে

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

পীরগঞ্জে ভূয়া এতিম দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

আপডেট সময় ০৭:২০:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ভূয়া এতিম ও অসহায় নিবাসী দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে গোগর পাটুয়াপাড়া হাফিজিয়া এতিমখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। গত রোববার রাতে প্রতিষ্ঠানটিতে পরিদর্শনে গিয়ে ভুয়া নিবাসী দেখেয়ে সরকারি অর্থ তছরুপ করার সত্যতা পেয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিলে ঐ এতিমখানার ধরতা-কর্তা অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তা বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন।

পীরগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলাম জানান, নিয়মিত তদারকির অংশ হিসেবে রোববার রাতে তাকে সাথে নিয়ে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের গোগর পাটুয়াপাড়া হাফিজিয়া এতিমখানা পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান। এ সময় ২৬ জন নিবাসীকে এতিমখানায় উপস্থিত পাওয়া যায়। অথচ তাদের খাতা পত্র যাচাই করে দেখা যায় ওই এতিমখানায় কাগজে কলমে ১৭০ জন নিবাসী রয়েছে। এর মধ্যে ৬২ জন সরকারি ক্যাপিটেশন অনুদান ভোগ করছে। সরকারী বিধি অনুযায়ী ৬২ জন এতিম ও অসহায় সরকারি ক্যাপিটেশন সুবিধা পেতে হলে প্রতিষ্ঠানটিতে কমপক্ষে ১২৪ জন এতিম অসহায় নিবাসী থাকার কথা। সেখানে তারা পেয়েছেন ২৬ জন। যাদের অনেকেই আবার এতিম নয়। সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ভূয়া এতিম ও আসহায় নিবাসী দেখিয়ে সরকারি অর্থ লোপাট করা হচ্ছে এমন অভিযোগও ছিল তাদের কাছে। পরিদর্শনে গিয়ে তারা এর সত্যতা পেয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

সমাজসেবা দপ্তরের তথ্য মতে বর্তমানে ভুয়া এতিম ও অসহায় নিবাসী দেখিয়ে ঐ এতিমখানা কতৃপক্ষ মাসে ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা সরকারী কোষাগার থেকে উত্তোলন করছেন। বিধি অনুযায়ী যার সিংহ ভাগই তছরুপ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সেখানে তারা ঐ দূর্নীতি করে আসছেন।

এদিকে ভুয়া এতিম ও অসহায় নিবাসী দেখিয়ে সরকারী অর্থ আত্নসাত করার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পদ্যার অন্তরাল থেকে ঐ এতিমখানার পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সোহেল রানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন। রবিবার রাতে তিনি তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন-“উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে উপজেলা প্রশাসন ঐ এতিমখানা পরিদর্শন করেছেন”।

মুলত টাকা লুটপাটের বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই ফেসবুকে এমনটা লেখা হয়েছে বলে অভিমত উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলামের।

অভিযোগ রয়েছে, সোহেল রানা ঢাকা এবং চিটাগাংয়ে অবস্থান করেন এবং বিভিন্ন দলের বড় বড় নেতাদের সাথে তার সথ্যতা রয়েছে। তার মদদে এতিমখানাটিতে সরকারী অর্থ আত্নসাতের মহোৎসব চলছে। সোহেলের ভয়ে এলাকার লোকজন প্রতিষ্ঠানটির দূর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারছেন না।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সোহেল রানা’র কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তার হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনিয়ম রয়েছে। সেটা সংশোধন করার চেষ্টা করছেন। অনেকের আপত্তির কারণে ফেসবুক পোষ্টটি তিনি বর্তমানে হাইড করে রেখেছেন।

অভিযোগ বিষয়ে এতিমখানাটির মুহতামিম রবিউল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে- তিনি রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার সাথে সাথেই ফোন কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেন।

এতিমখানার সভাপতি মঈনুল হোসেন সোহাগ জানান, কর্নেল (অব:) সোহেলের বাবা এ হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানাটি করে গেছেন। এখন তারা কষ্ট করে প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। সেখানে কিছু সমস্যা তো আছেই। বিষয়টি শিথিলতার সহিত দেখার আহবান জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান বলেন, সমাজ সেবা কর্মকর্তার সাথে তিনি ঐ এতিমখানা পরিদর্শনে যান। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির দাপ্তরিক নিবাসীর সাথে বাস্তবতার বিশাল ফারাক দেখতে পান। সমাজসেবা দপ্তর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।