ঢাকা ১০:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
আমরা যেন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি : ড. ইউনূস ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে যুগপৎ সঙ্গীদের সাথে আলোচনায় বিএনপি হামজার পর এবার আসছেন কানাডার সামিত সকল প্রকার অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের আহ্বান উপদেষ্টা আসিফের সরকারের মূল উদ্দেশ্য শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা : গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাকিস্তানের কাছেও হার বাংলাদেশের; কঠিন সমীকরণে বিশ্বকাপ ভাগ্য পারমাণবিক ইস্যুতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা হাসিনাসহ ১২ জনের নামে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারির আবেদন মুসলিম সংখ্যলঘুদের নিয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য ভারতের প্রত্যাখ্যান সংস্কার ও শেখ হাসিনার বিচারের আগে নির্বাচন নয় : গোলাম পরওয়ার

দেড় পোয়া চালে চলে বিধবা তিন বোনের ইফতার, সেহরী

বাঁশ ঝাড়ের নীচে টিনের ভাঙ্গা ঘরে বসবাস করেন বিধবা তিন বোন। রমজানে কষ্টের শেষ নেই তাদের। ইফতার ও সেহরীর জোগাড় করা কঠিন। মাত্র দেড় পোয়া চাল রান্না করে তিন বিধবা বোন ইফতার ও সেহরী সেরে নেন। খুব খাদ্য কষ্টে থাকে। তবু জানতে দিতে চায় না কাউকে। চুপচাপ বসে থাকে সেচ ক্যানেলের পাশে। ক্যানেলের পাশে ক্রয় করা এক শতক জমিতে তিনবোন স্বাধীন ভাবে ঘুমান, এটাই নাকি তাদের কাছে বড় শান্তি-সুখের।

কৌতুহলে সরেজমিনে গত সোমবার বিকেলে হঠাৎ গিয়ে দেখা গেছে, খোলা চুলায় ভাত রান্না হচ্ছে। চুলায় বাঁশের পাতা দিয়ে জাল দিচ্ছে বড় বোন আছিয়া বেগম। মাত্র দেড় পোয়া চাল। এতেই তিন বিধবা বোনের ইফতার ও সেহরী হবে। তরকারী কি রান্না হবে পরিকল্পনায় নেই তাদের। পাতলা ডাল নয়তো আলু ভর্তা। এমনটি জানালো বড় বোন আছিয়া বেগম। সাংবাদিক পরিচয় দিলে তারা একটি ভাঙ্গাঁ টুলে বসতে দেন। কথায় কথায়,কথা জমে উঠে অনেক। কিন্তু কারো কাছে কিছু চাইবার ইচ্ছে নেই তাদের।

রংপুর সদর উপজেলার হরিদেবপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের হরকলি গ্রামের মধ্যখান দিয়ে তৈরী করা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসফোরআর ক্যানেলের পাশে একটি বাঁশ ঝাড়ের ভিতরে বসবাস করেন বিধবা তিন বোন আছিয়া, ওছিয়া ও হুজবী। সন্তানেরা যারা ছিল ছেড়ে গেছে সবাই। এখন তিন বোন যেদিন যেরকম কাজ পায় তা থেকে যা আয় হয় তাদিয়েই চালিয়ে নেয় জীবন।

কথা হয় আছিয়ার সাথে। তিনি জানান, দেশভাগের সময় ১৯৪৭ সালে তার পিতা ভারত থেকে বাংলাদেশ চলে আসেন। তখন আছিয়ার বয়স ৭/৮ বছর। এরপর থেকে তারা রিফুজি হিসেবে সরকারী জমিতে বসবাস শুরু করেন। বিয়ে হয়েছিল স্বামী মৃত্যুবরণ করেছে বিয়ের ৮ বছরের মাথায়। দুটি ছেলে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করা হয়ে উঠেনি তার। ছেলে দুটির একটি মানসিক ভারসম্যহীন অন্যটি বেকার।

ছোট বোন অছিয়ার স্বামী মৃত্যুবরণ করার পর সে একটি কন্যা সন্তান নিয়ে নতুন করে বিয়ের পিড়িঁতে বসেননি। কন্যা সন্তানটির বিয়ে দিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে সন্তান জন্মদানের সময় মৃত্যু বরণ করেছে। মেঝ বোন হুজবীর বিয়ে হয়েছিল যশোরে। স্বামী মৃত্যু বরণ করার পর সন্তানরা সবাই আলাদা হয়ে সংসার করছে। নিজেকে অপাঙত্তেয় ভেবে চলে এসেছে বড় বোনের কাছে।

বিধবা তিন বোন এখন এক সাথে মিলে মিশে থাকে। বড় বোন আছিয়া বেগম জানান, ২৪ বছর আগে এসফোরআর ক্যানেলের পাশে এক শতক জমি তিনি ক্রয় করেছেন কেচু নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে। অন্য কোথাও আশ্রয় না নিয়ে নিজের এক শতক জমিতে স্বাধীন ভাবে ঘুমাতে পারছেন এটিই শান্তি। আছিয়া বেগমদের বাড়ীর সামনেই কবরস্থান। আছিয়া বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে কবরস্থানের দিকে তাকিয়ে বলেন, অনেক বয়স হয়েছে। খাই আর না খাই ওই খানে যেতে হবে চিরস্থায়ী থাকার জন্য। এই বাড়ী- বাড়ী নয় , ওটাই আসল বাড়ী।

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

আমরা যেন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি : ড. ইউনূস

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

দেড় পোয়া চালে চলে বিধবা তিন বোনের ইফতার, সেহরী

আপডেট সময় ১২:১৭:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

বাঁশ ঝাড়ের নীচে টিনের ভাঙ্গা ঘরে বসবাস করেন বিধবা তিন বোন। রমজানে কষ্টের শেষ নেই তাদের। ইফতার ও সেহরীর জোগাড় করা কঠিন। মাত্র দেড় পোয়া চাল রান্না করে তিন বিধবা বোন ইফতার ও সেহরী সেরে নেন। খুব খাদ্য কষ্টে থাকে। তবু জানতে দিতে চায় না কাউকে। চুপচাপ বসে থাকে সেচ ক্যানেলের পাশে। ক্যানেলের পাশে ক্রয় করা এক শতক জমিতে তিনবোন স্বাধীন ভাবে ঘুমান, এটাই নাকি তাদের কাছে বড় শান্তি-সুখের।

কৌতুহলে সরেজমিনে গত সোমবার বিকেলে হঠাৎ গিয়ে দেখা গেছে, খোলা চুলায় ভাত রান্না হচ্ছে। চুলায় বাঁশের পাতা দিয়ে জাল দিচ্ছে বড় বোন আছিয়া বেগম। মাত্র দেড় পোয়া চাল। এতেই তিন বিধবা বোনের ইফতার ও সেহরী হবে। তরকারী কি রান্না হবে পরিকল্পনায় নেই তাদের। পাতলা ডাল নয়তো আলু ভর্তা। এমনটি জানালো বড় বোন আছিয়া বেগম। সাংবাদিক পরিচয় দিলে তারা একটি ভাঙ্গাঁ টুলে বসতে দেন। কথায় কথায়,কথা জমে উঠে অনেক। কিন্তু কারো কাছে কিছু চাইবার ইচ্ছে নেই তাদের।

রংপুর সদর উপজেলার হরিদেবপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের হরকলি গ্রামের মধ্যখান দিয়ে তৈরী করা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসফোরআর ক্যানেলের পাশে একটি বাঁশ ঝাড়ের ভিতরে বসবাস করেন বিধবা তিন বোন আছিয়া, ওছিয়া ও হুজবী। সন্তানেরা যারা ছিল ছেড়ে গেছে সবাই। এখন তিন বোন যেদিন যেরকম কাজ পায় তা থেকে যা আয় হয় তাদিয়েই চালিয়ে নেয় জীবন।

কথা হয় আছিয়ার সাথে। তিনি জানান, দেশভাগের সময় ১৯৪৭ সালে তার পিতা ভারত থেকে বাংলাদেশ চলে আসেন। তখন আছিয়ার বয়স ৭/৮ বছর। এরপর থেকে তারা রিফুজি হিসেবে সরকারী জমিতে বসবাস শুরু করেন। বিয়ে হয়েছিল স্বামী মৃত্যুবরণ করেছে বিয়ের ৮ বছরের মাথায়। দুটি ছেলে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করা হয়ে উঠেনি তার। ছেলে দুটির একটি মানসিক ভারসম্যহীন অন্যটি বেকার।

ছোট বোন অছিয়ার স্বামী মৃত্যুবরণ করার পর সে একটি কন্যা সন্তান নিয়ে নতুন করে বিয়ের পিড়িঁতে বসেননি। কন্যা সন্তানটির বিয়ে দিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে সন্তান জন্মদানের সময় মৃত্যু বরণ করেছে। মেঝ বোন হুজবীর বিয়ে হয়েছিল যশোরে। স্বামী মৃত্যু বরণ করার পর সন্তানরা সবাই আলাদা হয়ে সংসার করছে। নিজেকে অপাঙত্তেয় ভেবে চলে এসেছে বড় বোনের কাছে।

বিধবা তিন বোন এখন এক সাথে মিলে মিশে থাকে। বড় বোন আছিয়া বেগম জানান, ২৪ বছর আগে এসফোরআর ক্যানেলের পাশে এক শতক জমি তিনি ক্রয় করেছেন কেচু নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে। অন্য কোথাও আশ্রয় না নিয়ে নিজের এক শতক জমিতে স্বাধীন ভাবে ঘুমাতে পারছেন এটিই শান্তি। আছিয়া বেগমদের বাড়ীর সামনেই কবরস্থান। আছিয়া বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে কবরস্থানের দিকে তাকিয়ে বলেন, অনেক বয়স হয়েছে। খাই আর না খাই ওই খানে যেতে হবে চিরস্থায়ী থাকার জন্য। এই বাড়ী- বাড়ী নয় , ওটাই আসল বাড়ী।