ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং-এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সোমবার (১৪ জুলাই) বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ইতিবাচক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে এস জয়শঙ্কর আশা প্রকাশ করেন, তার সফর আলোচনার এই ধারা বজায় রাখবে। খবর এনডিটিভির।
বৈঠকে জয়শঙ্কর চীনের সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর সভাপতিত্বকে ভারতের পক্ষ থেকে সমর্থনের কথাও জানান।
এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে এস জয়শঙ্কর লেখেন, “আজ বেইজিংয়ে পৌঁছানোর পরপরই ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং-এর সঙ্গে সাক্ষাতে খুশি হয়েছি। চীনের এসসিও সভাপতিত্বের প্রতি ভারতের সমর্থন জানিয়েছি। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি কথা উল্লেখ করেছি এবং আত্মবিশ্বাসী যে এই সফরের আলোচনাগুলো সেই ইতিবাচক ধারাই বজায় রাখবে।”
বৈঠকের শুরুতে জয়শঙ্কর বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মধ্যে কাজানে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর থেকে দু’দেশের সম্পর্ক উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তিনি জানান, “এসসিও-তে চীনের সফল সভাপতিত্বকে ভারত সমর্থন করে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গত অক্টোবরে কাজানে মোদি ও শি জিনপিং-এর বৈঠকের পর থেকে স্থিরভাবে উন্নত হচ্ছে। আমি নিশ্চিত, আমার এই সফরের আলোচনাগুলো ইতিবাচক ধারায় চলবে।”
জয়শঙ্কর উল্লেখ করেন, ভারত-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকী পালন করা হয়েছে এবং কাইলাস মানসরোবর যাত্রা পুনরায় চালু করাকে ভারতীয়দের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পালন করেছি। মানসরোবর যাত্রা পুনরায় চালু হওয়া ভারতবাসীর কাছে অত্যন্ত প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। আমাদের সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ পারস্পরিক লাভজনক ফল দিতে পারে।”
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে “জটিল” আখ্যা দিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, “আমাদের দেখা করার এই সময়ে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। প্রতিবেশী দেশ এবং বৃহৎ অর্থনীতির প্রতিনিধিত্বকারী দুই দেশ হিসেবে ভারত-চীনের মধ্যে খোলামেলা মতবিনিময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
সিঙ্গাপুর সফর শেষে জয়শঙ্কর বেইজিং পৌঁছান। এটি ছিল পাঁচ বছরের মধ্যে তার প্রথম চীন সফর। তিনি সোমবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
উল্লেখ্য, জয়শঙ্কর ও ওয়াং ই সর্বশেষ দেখা করেছিলেন ফেব্রুয়ারিতে, জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে।
চীনের তিয়ানজিন শহরে আগামী ১৫ জুলাই এসসিও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন জয়শঙ্কর। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত এসসিও কাউন্সিল অব ফরেন মিনিস্টার্স (সিএফএম) বৈঠকে অংশ নেবেন এবং এ সময় বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করবেন।”
২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চীন সংঘর্ষে দুই পক্ষের সেনা নিহত হয়। এটি ছিল চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক সীমান্ত সংঘর্ষ।
এই ঘটনার পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চরম উত্তেজনায় পৌঁছায়। তবে গত বছর কাজানে মোদি-শি বৈঠকে সীমান্ত আলোচনার জন্য স্থগিত হয়ে থাকা স্পেশাল রিপ্রেজেন্টেটিভ (এসআর) সংলাপ আবার শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত জুনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল চীন সফর করেন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আগামী মাসে ভারত সফরে আসবেন বলে জানা গেছে।
এই সফর ও আলোচনা দুদেশের মাঝে স্থায়ী সমাধান ও সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।