জুয়েল রানা, চলনবিল ( সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিকের সাড়ে ৪ লাখ টাকার প্রকল্পে নামমাত্র কাজ, ঘষামাজা ও পুরাতন আসবাবপত্র রং চং, মেরামত করে সিংহভাগ অর্থ নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে।
উল্লাপাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলার সলঙ্গা ইউনিয়নের আঙ্গারু কমিউনিটি ক্লিনিকের জলছাদ ঢালাই, সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন, নতুন আসবাবপত্র ক্রয়ে স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন তহবিল হতে ৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্প সভাপতি হিসেবে সলঙ্গা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল খালেককে দায়িত্ব দেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিডিউল মোতাবেক কাজ না করে ঘষামাজা আর মাত্র কয়েক বস্তা বালু, সিমেন্ট দ্বারা ক্লিনিকের ছাদ সংস্কার, প্লাস্টার ও চুনকালি দিয়ে সংস্কারকাজ ঢেকে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ক্লিনিকে নতুন আসবাবপত্র ক্রয় না করে কমিউনিটি ক্লিনিকের পুরাতন বেড, চেয়ার, টেবিল, আলমারি সলঙ্গা বাজারের আরিফ স্টীল ঘরে নিয়ে ঘষামাজা ও রং করেই ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবে সিসিতে প্রকল্পের কাজে নয়ছয় করে বিল উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে সরকারি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন প্রকল্পের সভাপতি আ: খালেক মেম্বারসহ সংশ্লিষ্টরা।
আঙ্গারু ক্লিনিকের ভুমিদাতা ও সভাপতি হাফিজুর রহমান (হাফিজ) জানান, কি কাজ করছে, কি কিনেছে আমি কিছুই জানি না। এলাকার কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সলঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও চেয়ারম্যান মিলে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই সকল প্রকল্পে অনিয়ম করে আসছে। শিডিউলে ২৫০ ফুট পাইপসহ ব্র্যান্ডের পাম্প দিয়ে আয়রনমুক্ত সাবমারসিবল বসানোর কথা থাকলেও নিম্নমানের শুধু ৬০ ফুট পাইপ ও পাম্প ব্যবহার করা হয়েছে। পানিতে সব সময় চাপাচাপা আয়রন বের হচ্ছে।
সলঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, সলঙ্গা ইউনিয়নের প্রতিটি প্রকল্পের শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেম্বার, চেয়ারম্যান, ইউপি সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে ইউনিয়নের প্রতিটি কাজে এমন অনিয়ম, দুর্নীতি হচ্ছে। সলঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদে যে প্রকল্পই আসে, তার বরাদ্দের অর্ধেক টাকা দিতে হয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমানকে। আর বাদবাকি অর্ধেক টাকা দিয়ে কিভাবে শিডিউল মোতাবেক কাজ করা যায়?
তিনি আরো বলেন, পর্যায়ক্রমে সকল মেম্বারদের কাজ পাওয়ার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান তার পছন্দের মেম্বার দ্বারা বারবার প্রকল্প দিয়ে কাজ করান। প্রতিটি প্রকল্পের শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেম্বার, চেয়ারম্যান, ইউপি সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে ইউনিয়নের প্রতিটি কাজে এমন অনিয়ম, দুর্নীতি হচ্ছে। সেই কারণে সলঙ্গা ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাট, টিআর, কাবিটা, ভিজিএফ, টিসিবি বা অন্যান্য প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অনেক অভিযোগ ইতিমধ্যে বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
আঙ্গারু কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি শফিকুল ইসলাম জানান, ক্লিনিকে কাজের নামে কত বরাদ্দ হয়েছে তা আমি জানি না। আমার কাছ থেকে বিভিন্ন সরঞ্জামের চাহিদা চাওয়া হয়েছিলো। আমি চেয়ার, টেবিল, ফ্যান, সামনে সেবাগ্রহীতাদের বসার বেঞ্চ, মিটার স্কেল, রোগীর বেড, আলমারি ইত্যাদির চাহিদা দিয়েছিলাম। পুরাতন আলমারি, টেবিল, রোগীর বেড ইত্যাদি সলঙ্গা হতে রং চং করে এনে আমাকে দিয়েছেন আব্দুল খালেক মেম্বার। তবে চাহিদার অনেক কিছুই বাদ আছে।
এই বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি আব্দুল খালেক মেম্বার জানান, ক্লিনিকের কাজকাম সুষ্ঠুভাবেই হয়েছে। আলমারি, টেবিল, রোগীর বেড ইত্যাদি সলঙ্গা আরিফের স্টিল ঘরে নিয়ে মেরামত ও রং করে এনেছেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ফোন কেটে দেন।
সলঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান তালুকদার বলেন, এই বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার পর ইউএনও স্যার এসে পরিদর্শন করে গেছেন। পরে কাজের বিষয়ে প্রত্যয়ন দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আমি নিজে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। নতুন করে আলমারি, টেবিল, রোগীর বেড ইত্যাদি আনা হয়েছে।
আরো পড়ুন : সলঙ্গায় অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলন করা বালু জব্দ