যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার একটি ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ, যিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত এক আবাসন ব্যবসায়ী। ওই ফ্ল্যাটটি টিউলিপকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছিল এবং তার জন্য টিউলিপকে কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয়নি।
শুক্রবার ৩ জানুয়ারি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালে টিউলিপ ওই ফ্ল্যাটটি পান। তখন এর মূল্য ছিল প্রায় ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা)। বর্তমানে ওই ফ্ল্যাটের মূল্য ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড (প্রায় ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা)।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী (ইকোনমিক সেক্রেটারি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তার দায়িত্বের মধ্যে আর্থিক খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধের বিষয়ও রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।
সম্প্রতি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে যুক্তরাজ্যের প্রোপ্রাইটি অ্যান্ড এথিকস টিম (পিইটি) দ্বারা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল, তবে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা বিদেশে অর্থপাচারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, টিউলিপ সিদ্দিকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফ্ল্যাটটি তার কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ পাওয়া হয়নি। তার একজন মুখপাত্র দাবি করেছেন, ফ্ল্যাট পাওয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে, আবদুল মোতালিফ এই ফ্ল্যাট কেনার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তবে পরবর্তী সময়ে তিনি ওই ফ্ল্যাট নিয়ে কী করেছেন, তা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। সূত্র জানায়, টিউলিপের বাবা-মা কঠিন সময়ের মধ্যে আবদুল মোতালিফকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন, যার কারণে তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফ্ল্যাটটি টিউলিপকে উপহার দেন।
এছাড়া, যুক্তরাজ্যের ভোটার তালিকার তথ্য অনুযায়ী, ফ্ল্যাটটি পাওয়ার পর কিছুদিন টিউলিপ সেখানে ছিলেন, পরে তার ভাইবোনরা সেখানে বসবাস শুরু করেন। এমপি হওয়ার সময় টিউলিপ তার হলফনামায় ফ্ল্যাট দুটি থেকে আসা ভাড়ার আয়ের কথা উল্লেখ করেছেন।
আবদুল মোতালিফ বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে বাস করছেন, এবং ওই এলাকার একটি ঠিকানায় মঈন গণি নামের এক আইনজীবীও বসবাস করতেন, যিনি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মামলা পরিচালনা করেছেন। মঈন গণির শেখ হাসিনার সঙ্গে ছবি রয়েছে। এছাড়া, মোতালিফের ঠিকানায় মজিবুল ইসলাম নামের একজন ব্যক্তি বসবাস করেন, যিনি ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
এখন পর্যন্ত টিউলিপ সিদ্দিকের ফ্ল্যাট পাওয়ার বিষয়ে কোনো অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে এই ঘটনার মাধ্যমে টিউলিপ এবং তার পরিবারের সম্পর্কের কিছু অন্ধকার দিক উন্মোচিত হয়েছে।