ঢাকা ০৮:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলি হামলায় পরিবারের সদস্যসহ গাজার হাসপাতালের পরিচালক নিহত

ডা. মারওয়ান সুলতান উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন

ইসরায়েলি বিমান হামলায় পরিবারের কয়েকজন সদস্যসহ গাজার একটি হাসপাতালের পরিচালক ড. মারওয়ান সুলতান নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ড. মারওয়ান সুলতান দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন।

একইসাথে এই ঘটনাকে গাজার “মেডিক্যাল কর্মীদের বিরুদ্ধে নৃশংস অপরাধ” উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, গাজা সিটি এলাকায় হামাসের “একজন গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাসীকে” লক্ষ্য করে তারা হামলা চালিয়েছে এবং “জড়িত না এমন বেসামরিক নাগরিকদের” ক্ষতি হওয়ার দাবি পর্যালোচনা করছে।

এদিকে “নিরাপদ অঞ্চল” আল-মাওয়াসিসহ বিভিন্ন জায়গায় চালানো হামলায় শিশুসহ অন্তত পাঁচজন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাগুলো।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ড. সুলতানের চিকিৎসাজীবন ছিল সহানুভূতিশীলতায় পূর্ণ, “যেখানে তিনি আমাদের জনগণের ওপর চলমান আগ্রাসনের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি আর দুঃসহ মুহূর্তে অটলতা ও আন্তরিকতার প্রতীক হয়ে ছিলেন।”

ড. সুলতান যে ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন, সেটিকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার “অযোগ্য” ঘোষণা করেছিল হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আর জাতিসংঘ জানিয়েছিল “বারবার ইসরায়েলি হামলায় স্থায়ী অবকাঠামোগত ক্ষতির” শিকার হয়েছে হামপাতালটি।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ওই এলাকায় “সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে” লড়াই চালাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, উত্তর গাজার প্রশাসনিক এলাকায় এখন আর কোনো কার্যকর হাসপাতাল নেই।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চিকিৎসা ও মানবিক টিমকে লক্ষ্য করে বার বার হামলার অভিযোগ তুলেছে হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) তাদের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা “জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের ক্ষতি হওয়ার বিষয়টিকে দুঃখজনক” বলে মনে করে আর “এমন ক্ষতি এড়াতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে”।

আইডিএফ আরও জানিয়েছে, হামাস “পরিকল্পিতভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বেসামরিক অবকাঠামো ব্যবহার করে এবং বেসামরিক জনসাধারণকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে”।

তবে ড. সুলতানের মেয়ে লুবনা আল-সুলতান জানান, “একটি এফ-১৬ ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি তার ঘর লক্ষ্য করে আঘাত করে।”

“বাড়ির সব কক্ষ অক্ষত থাকলেও কেবল তার কক্ষটিই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয়েছে, আমার বাবা সেখানেই শহীদ হয়েছে,” অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, তার বাবা “কোনো দল বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, যুদ্ধের পুরোটা সময় তিনি কেবল তার চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য চিন্তিত ছিলেন।”

ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজাজুড়ে বুধবার দুপুরের আগের ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৩৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

খান ইউনুসের আল-মাওয়াসি এলাকায় চালানো ইসরায়েলি হামলায় একটি তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে এবং শিশুসহ আরও অনেকে আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাগুলো।

নিহতদের স্বজনরা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৪০ মিনিটে হামলাটি যখন চালানো হয়, তারা ঘুমিয়ে ছিলেন।

তামাম আবু রিজক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ওই হামলা “ভূমিকম্পের মতো পুরো এলাকা কাঁপিয়ে তুলেছিল”। তিনি “বাইরে এসে দেখেন তাঁবুতে আগুন ধরে গেছে”। আল-মাওয়াসি এলাকাটিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী “নিরাপদ অঞ্চল” ঘোষণা করেছিল।

এদিকে জাতিসংঘ বলেছে গাজার ৮০ শতাংশ এলাকা এখন হয় ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন অথবা খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

“তারা নিরাপদ এলাকা ভেবে এখানে এসেছিল, কিন্তু এখানে এসেই তারা নিহত হলো… তারা কী করেছিল?” বলেন মহা আবু রিজক।

ধ্বংসস্তূপ আর এলোমেলোভাবে পড়ে থাকা ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের স্তূপের মধ্যে থেকে একটি ডায়াপারের প্যাকেট তুলে ধরে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেন, “এটা কি কোনো অস্ত্র?”

এএফপির ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালে একটি গাড়ি থেকে রক্তাক্ত শিশুদের কোলে নিয়ে একদল পুরুষ ছুটছেন। হাসপাতালের ভেতরে দেখা যায়, ডাক্তাররা চিকিৎসা করার সময় ছোট ছোট শিশুরা কাঁদছে।

এএফপির আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, হাসপাতালে স্বজনদের লাশ ধরে কাঁদছেন নারী স্বজনরা।

“যেকোনো ধর্মের মানুষকে এখন একটা কিছু করতে হবে আর বলতে হবে–– যথেষ্ট হয়েছে! এই যুদ্ধ বন্ধ করো!”—বলেন ইকরাম আল-আখরাস, ইসরায়েলি হামলায় তিনি তার একাধিক স্বজন হারিয়েছেন।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা সিটিতে একই পরিবারের আরও চারজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাগুলো।

নিহত চারজন হলেন আহমেদ আয়াদ জেনো, তার স্ত্রী আয়াত জেনো আর তাদের দুই মেয়ে জাহরা জেনো ও ওবায়দা জেনো, জানিয়েছে ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম ডব্লিউএএফএ। এই দুটি ঘটনার বিষয়ে মন্তব্যের জন্য আইডিএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিবিসি।

সেভ দ্য চিলড্রেনের হয়ে গাজায় কাজ করা র‍্যাচেল কামিংস সাংবাদিকদের পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝাতে গিয়ে জানান, দাতব্য সংস্থার শিশুবান্ধব জায়গা “উইশিং সার্কেল”-এ শিশুরা সম্প্রতি “মরে যাওয়া ইচ্ছা” প্রকাশ করছে—যাতে তারা তাদের মৃত মা-বাবার সঙ্গে থাকতে পারে অথবা খাবার ও পানি পেতে পারে।

এই সপ্তাহে যেখানে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়েছে, এসময় গাজায় তাপমাত্রাও ছাড়িয়েছে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তাঁবুতে বসবাসরত বাস্তুচ্যুতরা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ ও ফ্যান ছাড়া পানি স্বল্পতার মধ্যে নিজেদের শীতল রাখতে লড়াই করছেন তারা।

রেদা আবু হাদায়েদ অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, এই গরম “অবর্ণনীয়” আর তার সন্তানরা ঘুমাতে পারছে না। “তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সারা দিন কাঁদে, তাপমাত্রা একটু কমলে তারা ঘুমায়,” বলেন তিনি। “সকাল হলে গরমের কারণে তারা আবার কাঁদতে শুরু করে।”

গাজার ওপর বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। একইসাথে মানবিক সহায়তা প্রবেশ ও বিতরণ নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। এরমধ্যেই সম্ভাব্য একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসেছেন মধ্যস্থতাকারীরা।

২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।

তারপর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ৫৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ১৫ হাজারের বেশি শিশু রয়েছে—এমনটাই জানিয়েছে সেখানকার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সূত্র : বিবিসি।

গাজায় ইসরাইলি অবরোধ; অপুষ্টিতে ৬৬ শিশুর মৃত্যু

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

ইসরায়েলি হামলায় পরিবারের সদস্যসহ গাজার হাসপাতালের পরিচালক নিহত

আপডেট সময় ১১:৫৫:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫

ইসরায়েলি বিমান হামলায় পরিবারের কয়েকজন সদস্যসহ গাজার একটি হাসপাতালের পরিচালক ড. মারওয়ান সুলতান নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ড. মারওয়ান সুলতান দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন।

একইসাথে এই ঘটনাকে গাজার “মেডিক্যাল কর্মীদের বিরুদ্ধে নৃশংস অপরাধ” উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, গাজা সিটি এলাকায় হামাসের “একজন গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাসীকে” লক্ষ্য করে তারা হামলা চালিয়েছে এবং “জড়িত না এমন বেসামরিক নাগরিকদের” ক্ষতি হওয়ার দাবি পর্যালোচনা করছে।

এদিকে “নিরাপদ অঞ্চল” আল-মাওয়াসিসহ বিভিন্ন জায়গায় চালানো হামলায় শিশুসহ অন্তত পাঁচজন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাগুলো।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ড. সুলতানের চিকিৎসাজীবন ছিল সহানুভূতিশীলতায় পূর্ণ, “যেখানে তিনি আমাদের জনগণের ওপর চলমান আগ্রাসনের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি আর দুঃসহ মুহূর্তে অটলতা ও আন্তরিকতার প্রতীক হয়ে ছিলেন।”

ড. সুলতান যে ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন, সেটিকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার “অযোগ্য” ঘোষণা করেছিল হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আর জাতিসংঘ জানিয়েছিল “বারবার ইসরায়েলি হামলায় স্থায়ী অবকাঠামোগত ক্ষতির” শিকার হয়েছে হামপাতালটি।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ওই এলাকায় “সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে” লড়াই চালাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, উত্তর গাজার প্রশাসনিক এলাকায় এখন আর কোনো কার্যকর হাসপাতাল নেই।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চিকিৎসা ও মানবিক টিমকে লক্ষ্য করে বার বার হামলার অভিযোগ তুলেছে হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) তাদের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা “জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের ক্ষতি হওয়ার বিষয়টিকে দুঃখজনক” বলে মনে করে আর “এমন ক্ষতি এড়াতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে”।

আইডিএফ আরও জানিয়েছে, হামাস “পরিকল্পিতভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বেসামরিক অবকাঠামো ব্যবহার করে এবং বেসামরিক জনসাধারণকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে”।

তবে ড. সুলতানের মেয়ে লুবনা আল-সুলতান জানান, “একটি এফ-১৬ ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি তার ঘর লক্ষ্য করে আঘাত করে।”

“বাড়ির সব কক্ষ অক্ষত থাকলেও কেবল তার কক্ষটিই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয়েছে, আমার বাবা সেখানেই শহীদ হয়েছে,” অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, তার বাবা “কোনো দল বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, যুদ্ধের পুরোটা সময় তিনি কেবল তার চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য চিন্তিত ছিলেন।”

ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজাজুড়ে বুধবার দুপুরের আগের ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৩৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

খান ইউনুসের আল-মাওয়াসি এলাকায় চালানো ইসরায়েলি হামলায় একটি তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে এবং শিশুসহ আরও অনেকে আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাগুলো।

নিহতদের স্বজনরা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৪০ মিনিটে হামলাটি যখন চালানো হয়, তারা ঘুমিয়ে ছিলেন।

তামাম আবু রিজক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ওই হামলা “ভূমিকম্পের মতো পুরো এলাকা কাঁপিয়ে তুলেছিল”। তিনি “বাইরে এসে দেখেন তাঁবুতে আগুন ধরে গেছে”। আল-মাওয়াসি এলাকাটিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী “নিরাপদ অঞ্চল” ঘোষণা করেছিল।

এদিকে জাতিসংঘ বলেছে গাজার ৮০ শতাংশ এলাকা এখন হয় ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন অথবা খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

“তারা নিরাপদ এলাকা ভেবে এখানে এসেছিল, কিন্তু এখানে এসেই তারা নিহত হলো… তারা কী করেছিল?” বলেন মহা আবু রিজক।

ধ্বংসস্তূপ আর এলোমেলোভাবে পড়ে থাকা ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের স্তূপের মধ্যে থেকে একটি ডায়াপারের প্যাকেট তুলে ধরে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেন, “এটা কি কোনো অস্ত্র?”

এএফপির ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালে একটি গাড়ি থেকে রক্তাক্ত শিশুদের কোলে নিয়ে একদল পুরুষ ছুটছেন। হাসপাতালের ভেতরে দেখা যায়, ডাক্তাররা চিকিৎসা করার সময় ছোট ছোট শিশুরা কাঁদছে।

এএফপির আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, হাসপাতালে স্বজনদের লাশ ধরে কাঁদছেন নারী স্বজনরা।

“যেকোনো ধর্মের মানুষকে এখন একটা কিছু করতে হবে আর বলতে হবে–– যথেষ্ট হয়েছে! এই যুদ্ধ বন্ধ করো!”—বলেন ইকরাম আল-আখরাস, ইসরায়েলি হামলায় তিনি তার একাধিক স্বজন হারিয়েছেন।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা সিটিতে একই পরিবারের আরও চারজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাগুলো।

নিহত চারজন হলেন আহমেদ আয়াদ জেনো, তার স্ত্রী আয়াত জেনো আর তাদের দুই মেয়ে জাহরা জেনো ও ওবায়দা জেনো, জানিয়েছে ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম ডব্লিউএএফএ। এই দুটি ঘটনার বিষয়ে মন্তব্যের জন্য আইডিএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিবিসি।

সেভ দ্য চিলড্রেনের হয়ে গাজায় কাজ করা র‍্যাচেল কামিংস সাংবাদিকদের পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝাতে গিয়ে জানান, দাতব্য সংস্থার শিশুবান্ধব জায়গা “উইশিং সার্কেল”-এ শিশুরা সম্প্রতি “মরে যাওয়া ইচ্ছা” প্রকাশ করছে—যাতে তারা তাদের মৃত মা-বাবার সঙ্গে থাকতে পারে অথবা খাবার ও পানি পেতে পারে।

এই সপ্তাহে যেখানে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়েছে, এসময় গাজায় তাপমাত্রাও ছাড়িয়েছে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তাঁবুতে বসবাসরত বাস্তুচ্যুতরা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ ও ফ্যান ছাড়া পানি স্বল্পতার মধ্যে নিজেদের শীতল রাখতে লড়াই করছেন তারা।

রেদা আবু হাদায়েদ অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, এই গরম “অবর্ণনীয়” আর তার সন্তানরা ঘুমাতে পারছে না। “তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সারা দিন কাঁদে, তাপমাত্রা একটু কমলে তারা ঘুমায়,” বলেন তিনি। “সকাল হলে গরমের কারণে তারা আবার কাঁদতে শুরু করে।”

গাজার ওপর বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। একইসাথে মানবিক সহায়তা প্রবেশ ও বিতরণ নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। এরমধ্যেই সম্ভাব্য একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসেছেন মধ্যস্থতাকারীরা।

২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।

তারপর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ৫৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ১৫ হাজারের বেশি শিশু রয়েছে—এমনটাই জানিয়েছে সেখানকার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সূত্র : বিবিসি।

গাজায় ইসরাইলি অবরোধ; অপুষ্টিতে ৬৬ শিশুর মৃত্যু