রেলওয়ের রানিং স্টাফদের ধর্মঘটের কারণে পূর্ব ঘোষিত দিনে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করতে পারল না বাংলাদেশ রেলওয়ে। মাইলেজসহ পেনশন ও আনুতোষিক দেওয়ার দাবিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্যরা রোববার থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
এ কারণে উদ্বোধনের সব আয়োজন সম্পন্ন করেও সোমবার চালু করা যায়নি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পুরো ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান রোববার রেলওয়ে মহাপরিচালকে এক চিঠিতে কর্মবিরতির কথা জানান।
এই রেলপথে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু এবং গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী হয়ে যশোর–খুলনা রেলপথে যাতায়াতের দূরত্বের সময় কমবে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার মত; যশোর–বেনাপোল রেলপথে ৪ ঘণ্টার মত। প্রতিটি সেকশনে পথ কমবে অর্ধেকের বেশি।
সে কারণে এই পথের এক একজোড়া ট্রেনকে দুইবার চালানোর কথা রয়েছে। আর তা উদ্বোধনের জন্য ২ ডিসেম্বর দিন ঠিক হয়েছিল।
কথা ছিল সকাল ৬টায় খুলনা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও ঢাকা থেকে বেলা ১১টায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের রুট ধরে চলবে। তার মধ্য দিয়েই পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর-খুলনা-বেনাপোল সেকশনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে। কিন্তু সে পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত রাখতে হচ্ছে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক ও পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, “আজ পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্প উদ্বোধন হচ্ছে না। তার কারণ প্রথমত টাইম শিডিউল এখনও করা হয় নাই। দ্বিতীয়ত ডেপ্লয়মেন্টটা পুরাপুরি হয় নাই।
“আরেকটা হচ্ছে আমাদের একটা ক্রাইসিস চলছে। মাইলেজ অ্যালাউন্সের জন্য রানিং স্টাফরা আন্দোলনে গেছে। তাদের আন্দোলনের জন্য আমাদের ট্রেন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। তাদের সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা চালু করতে পারছি না।”
রেলওয়ে একজন কর্মী জানান, ট্রেন চালক, সহ–চালক, পরিচালক ও টিকিট চেকারদের বিশেষ আর্থিক সুবিধা দেওয়া হত রেলওয়ের ১৮৩২ সালের আইন অনুযায়ী।
দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫–১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সেজন্য তাদের দেওয়া হত বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ।
প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হত।
এ ছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয়, তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হত।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে।
রেলওয়ে মহাপরিচালককে লেখা চিঠিতে মো. মজিবুর রহমান বলেন, “পার্ট অব পে রানিং অ্যালাউন্সের ওপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অসম্মতি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাতিল না হলে প্রাথমিক কর্মসূচি হিসেবে ১ ডিসেম্বর থেকে রানিং স্টাফরা ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটি করবেন না। তারা আন্ডার রেস্টে (বিশ্রামকালীন) ডিউটি করবেন না। এ সময় রেলের লোকোমাস্টার (এলএম), সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) ও সাব লোকোমাস্টার (এসএলএম) কর্মবিরতিতে যাবেন।
“সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) নিয়োগপত্রের দুটি ধারা বাতিল করে একই গ্রেডে কর্মরত রেলওয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে বেতন কাঠামো ও আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।”
এদিকে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের ধর্মঘটের কারণে সূচি মেনে ট্রেন চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষকে। তাতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
রোববার ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে ১০টি ট্রেন সময়মত ছাড়তে পারেনি। সেমবারও একই পরিস্থিতি চলছে বলে রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।