ঢাকা ০৯:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাত্র এক বছরে যেভাবে বদলে গেল ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক

গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ক্ষমতার নাটকীয় পটপরিবর্তনের পর ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে ধরনের আমূল পরিবর্তন এসেছে তা এক কথায় নজিরবিহীন। বহুদিনের মিত্র দুটি দেশের সরকার এখন দৃশ্যতই পরস্পরকে সন্দেহ ও অবিশ্বাস করছে, ঠিক শত্রুতা না হলেও সম্পর্ক গড়াচ্ছে বিদ্বেষের দিকে।

বাংলাদেশের পথেপ্রান্তরে ‌‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগানের ধ্বনি আর পাশাপাশি ভারতজুড়ে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা কিংবা কথিত বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান – দুই দেশের মাঝে আচমকাই যেন অনতিক্রম্য একটা দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছে।

যে বাংলাদেশকে ভারত তাদের ‘প্রতিবেশী বা সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে দাবি করতো – সে দেশে এখন ভারতের ভিসা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ, বাংলাদেশকে দেওয়া বিভিন্ন বাণিজ্য সুবিধাও একের পর এক বাতিল, দেশটিতে অবকাঠামো, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে ভারতের বহু প্রকল্পের কাজও অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবি হয়ে আছে।

প্রায়ই দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বিডিআর ও বিএসএফের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষ ঘটছে। কখনো আবার এতে যোগ দিচ্ছে দুদিকের স্থানীয়রাও।

দুদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানও একরকম স্তব্ধ, এমন কি পর্যটন বা চিকিৎসা সফরও এখন সাধারণের নাগালের বাইরে।

বস্তুত ভারত এটাও পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছে যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে তারা ন্যূনতম প্রয়োজনের বাইরে পুরোদস্তুর কোনো ‘এনগেজমেন্টে’ যেতেও আগ্রহী নয় – যে কারণে গঙ্গা চুক্তির নবায়ন কিংবা অভিন্ন নদীগুলোর পানি ভাগাভাগির মতো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও থমকে আছে।

বস্তুত দুদেশেই পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা এটা মানেন, বাংলাদেশে অন্তর্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত এক বছরে ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে ঠিক বন্ধুত্বপূর্ণ বা স্বাভাবিক বলা চলে না কোনো মতেই।

ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ বা কাজ চালানোর মতো সম্পর্কটা হয়তো কোনোক্রমে টিকে আছে, কিন্তু পারস্পরিক আস্থা বা ভরসার জায়গাটা যে হারিয়ে গেছে এটা বোঝার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হওয়ারও কোনো দরকার নেই।

আর সম্পর্কের এই অবনতির ক্ষেত্রে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সব ধরনের মাত্রা বা ‘ডায়মেনশন’ই কিন্তু আছে।
দিল্লির দিক থেকে এই ফ্যাক্টরগুলো ঠিক কীভাবে কাজ করেছে – অথবা ঠিক কোন কোন দৃষ্টিকোণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে, এই প্রতিবেদনে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে সেটাই।

সম্পর্কটা ছিল একজন মাত্র ব্যক্তির সঙ্গে
যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে মাত্র এক বছর আগেও দুই দেশের সরকার ‘সোনালি অধ্যায়’ বলে বর্ণনা করত, সেটা এত দ্রুত কীভাবে মুখ থুবড়ে পড়লো, দিল্লিতে এখনও কান পাতলেই তার নানা ব্যাখ্যা শোনা যায়।

সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাটা হলো, আসলে ভারতের এই তথাকথিত সুসম্পর্কটা ছিল একজন ব্যক্তি বা একটি দলের সঙ্গে – পুরো দেশের সঙ্গে নয়।

দিল্লিতে পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞ ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্তর বলেন, বলতে কোনো দ্বিধা নেই, শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রিজম দিয়ে বাংলাদেশকে দেখেছিল ভারত আর এজন্যই দিল্লিকে আজ চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।

তার কথায়, ভারতের একটা ঐতিহাসিক সম্পর্ক ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে এবং অবশ্যই সেটা শেখ হাসিনার সঙ্গে। তারপর উনি যখন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচিত হয়ে আসলেন, সেই যে কাজটা শুরু করেছিলেন ভারতের সঙ্গে সেটা ও দেশের কোনো সরকারই এর আগে করতে পারেনি।

তিনি আরও জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা শুধু ভারতের সিকিওরিটি কনসার্নগুলোই অ্যাড্রেস করেননি, ভারত যেভাবে ট্রেড বা কানেক্টিভিটি প্রোজেক্টগুলো চেয়েছিল সেটাও তার মতো করে আগে কোনো সরকার করেনি।

কিন্তু এই সুবিধা পেতে গিয়ে ভারত বাংলাদেশের ভেতরে কী অন্তর্দ্বন্দ্ব (ক্রস কারেন্টস) তৈরি হচ্ছে কিংবা শেখ হাসিনার কার্যকলাপ নিয়ে জনরোষ সৃষ্টি হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি।

তিনি বলেন, বিষয়টার এমন যে একদম একজনের সঙ্গেই শুধু কাজ করছি, কিন্তু সে কী করছে সেটাকে ইন্টারনাল ম্যাটার বলে ইগনোর করে যাচ্ছি – আমরা শুধু দেখছি আমাদের সঙ্গে তো সম্পর্ক ভালো আছে, বাকিটা আমাদের কিছু যায় আসে না।”

শ্রীরাধা দত্ত বলেন, এই পুরো জিনিসটার একটা ড্রাস্টিক ট্রান্সফর্মেশন হলো ৫ আগস্টে। আর ঠিক তার আগে এটাও আমরা দেখেছি একটা চরম বিদ্বেষ তৈরি হচ্ছিল শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে – আর তাদের স্বাভাবিক মিত্র হিসেবে ভারতের বিরুদ্ধেও।

এরপর যখন সেই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ভারতেই আশ্রয় ও আতিথেয়তা পেলেন, ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভটা তাতে আরও বাড়লো।

সেই জায়গা থেকেই বাংলাদেশে যে ‘একটা অদ্ভুত রাগ’ ভারতের ওপর তৈরি হয়েছিল – আজকের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ঠিক সেটারই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই বিশেষজ্ঞ।

এত বিনিয়োগ, এত স্টেক – তবুও কেন অস্বস্তি?
কিন্তু যে বাংলাদেশে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ জড়িয়ে এবং সেখানে বিভিন্ন সেক্টরে ভারতের যে বিপুল বিনিয়োগ সেখানে তো অন্তত এসব সামরিক বা অর্থনৈতিক কারণেও দিল্লির পক্ষ থেকে একটা মসৃণ সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত ছিল?

ভারতের অর্থনীতিবিদ ও আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির বিশেষজ্ঞ ড. প্রবীর দে মনে করেন, ভারত যে বাংলাদেশে তাদের এই ইন্টারেস্টগুলো খরচের খাতায় ফেলে দিয়েছে তা নয় – তবে গোটা বিষয়টাকে একটা ‌‘পজ’ বা সাময়িক বিরতির মোডে রাখা হয়েছে।

দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্ক আরআইএস-এর এই অধ্যাপক বিবিসিকে বলেন, সম্পর্কটা বিগড়ে যায়নি। আমি সেটা বলবো না। সম্পর্কটা আছে … কিন্তু ব্যাপারটা এরকম যে দুটো বন্ধুর মধ্যে এখন কিছুদিন কথাবার্তা হচ্ছে না।

অন্যভাবে বললে, সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু আমরা ঠিক করেছি যে এখন কিছুদিন অন্যভাবে থাকা যাক। আমরা এখন ওয়েট করে আছি, বিশেষ করে ইন্ডিয়ার দিক থেকে, যে বাংলাদেশ কখন ‘ফার্স্ট মুভ’টা করবে।

তিনি আরও বলেন, এই ‘ফার্স্ট মুভ’ – বা সম্পর্কটা আবার স্বাভাবিক করতে কোনো এক পক্ষের দিক থেকে ইঙ্গিত সেটা বোধহয় বাংলাদেশে নির্বাচনের স্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা হলে বা একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পরই হবে বলে ভারতের ধারণা। আসলে বাংলাদেশ ও ভারত দুজনে দুজনকে নিয়েই থাকতে চায় – সেটাই স্বাভাবিক, কারণ প্রতিবেশী আমরা। প্রতিবেশীকে তো আর পাল্টানো যায় না।

প্রবীর দে বলেন, এবার যেটা হয়েছে যে একটা অদ্ভুত দৃশ্যপট তৈরি হয়েছে … দুই দেশের মধ্যে যে রিলেশনটা একাত্তর বা তারও আগে থেকে তৈরি হয়েছিল, যেটা সরকার পরিবর্তন হলেও ভেঙে যায়নি – এবারে সেখানে আঘাতটা লাগানো হচ্ছে। কুড়ালটা ওখানে মারা হয়েছে আর কী। সূত্র : বিবিসি।

ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাবে ভারতের শেয়ারবাজারে বড় ধস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

জনপ্রিয় সংবাদ

আটোয়ারীতে গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

মাত্র এক বছরে যেভাবে বদলে গেল ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক

আপডেট সময় ১১:১৭:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫

গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ক্ষমতার নাটকীয় পটপরিবর্তনের পর ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে ধরনের আমূল পরিবর্তন এসেছে তা এক কথায় নজিরবিহীন। বহুদিনের মিত্র দুটি দেশের সরকার এখন দৃশ্যতই পরস্পরকে সন্দেহ ও অবিশ্বাস করছে, ঠিক শত্রুতা না হলেও সম্পর্ক গড়াচ্ছে বিদ্বেষের দিকে।

বাংলাদেশের পথেপ্রান্তরে ‌‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগানের ধ্বনি আর পাশাপাশি ভারতজুড়ে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা কিংবা কথিত বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান – দুই দেশের মাঝে আচমকাই যেন অনতিক্রম্য একটা দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছে।

যে বাংলাদেশকে ভারত তাদের ‘প্রতিবেশী বা সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে দাবি করতো – সে দেশে এখন ভারতের ভিসা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ, বাংলাদেশকে দেওয়া বিভিন্ন বাণিজ্য সুবিধাও একের পর এক বাতিল, দেশটিতে অবকাঠামো, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে ভারতের বহু প্রকল্পের কাজও অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবি হয়ে আছে।

প্রায়ই দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বিডিআর ও বিএসএফের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষ ঘটছে। কখনো আবার এতে যোগ দিচ্ছে দুদিকের স্থানীয়রাও।

দুদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানও একরকম স্তব্ধ, এমন কি পর্যটন বা চিকিৎসা সফরও এখন সাধারণের নাগালের বাইরে।

বস্তুত ভারত এটাও পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছে যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে তারা ন্যূনতম প্রয়োজনের বাইরে পুরোদস্তুর কোনো ‘এনগেজমেন্টে’ যেতেও আগ্রহী নয় – যে কারণে গঙ্গা চুক্তির নবায়ন কিংবা অভিন্ন নদীগুলোর পানি ভাগাভাগির মতো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও থমকে আছে।

বস্তুত দুদেশেই পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা এটা মানেন, বাংলাদেশে অন্তর্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত এক বছরে ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে ঠিক বন্ধুত্বপূর্ণ বা স্বাভাবিক বলা চলে না কোনো মতেই।

ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ বা কাজ চালানোর মতো সম্পর্কটা হয়তো কোনোক্রমে টিকে আছে, কিন্তু পারস্পরিক আস্থা বা ভরসার জায়গাটা যে হারিয়ে গেছে এটা বোঝার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হওয়ারও কোনো দরকার নেই।

আর সম্পর্কের এই অবনতির ক্ষেত্রে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সব ধরনের মাত্রা বা ‘ডায়মেনশন’ই কিন্তু আছে।
দিল্লির দিক থেকে এই ফ্যাক্টরগুলো ঠিক কীভাবে কাজ করেছে – অথবা ঠিক কোন কোন দৃষ্টিকোণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে, এই প্রতিবেদনে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে সেটাই।

সম্পর্কটা ছিল একজন মাত্র ব্যক্তির সঙ্গে
যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে মাত্র এক বছর আগেও দুই দেশের সরকার ‘সোনালি অধ্যায়’ বলে বর্ণনা করত, সেটা এত দ্রুত কীভাবে মুখ থুবড়ে পড়লো, দিল্লিতে এখনও কান পাতলেই তার নানা ব্যাখ্যা শোনা যায়।

সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাটা হলো, আসলে ভারতের এই তথাকথিত সুসম্পর্কটা ছিল একজন ব্যক্তি বা একটি দলের সঙ্গে – পুরো দেশের সঙ্গে নয়।

দিল্লিতে পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞ ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্তর বলেন, বলতে কোনো দ্বিধা নেই, শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রিজম দিয়ে বাংলাদেশকে দেখেছিল ভারত আর এজন্যই দিল্লিকে আজ চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।

তার কথায়, ভারতের একটা ঐতিহাসিক সম্পর্ক ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে এবং অবশ্যই সেটা শেখ হাসিনার সঙ্গে। তারপর উনি যখন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচিত হয়ে আসলেন, সেই যে কাজটা শুরু করেছিলেন ভারতের সঙ্গে সেটা ও দেশের কোনো সরকারই এর আগে করতে পারেনি।

তিনি আরও জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা শুধু ভারতের সিকিওরিটি কনসার্নগুলোই অ্যাড্রেস করেননি, ভারত যেভাবে ট্রেড বা কানেক্টিভিটি প্রোজেক্টগুলো চেয়েছিল সেটাও তার মতো করে আগে কোনো সরকার করেনি।

কিন্তু এই সুবিধা পেতে গিয়ে ভারত বাংলাদেশের ভেতরে কী অন্তর্দ্বন্দ্ব (ক্রস কারেন্টস) তৈরি হচ্ছে কিংবা শেখ হাসিনার কার্যকলাপ নিয়ে জনরোষ সৃষ্টি হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি।

তিনি বলেন, বিষয়টার এমন যে একদম একজনের সঙ্গেই শুধু কাজ করছি, কিন্তু সে কী করছে সেটাকে ইন্টারনাল ম্যাটার বলে ইগনোর করে যাচ্ছি – আমরা শুধু দেখছি আমাদের সঙ্গে তো সম্পর্ক ভালো আছে, বাকিটা আমাদের কিছু যায় আসে না।”

শ্রীরাধা দত্ত বলেন, এই পুরো জিনিসটার একটা ড্রাস্টিক ট্রান্সফর্মেশন হলো ৫ আগস্টে। আর ঠিক তার আগে এটাও আমরা দেখেছি একটা চরম বিদ্বেষ তৈরি হচ্ছিল শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে – আর তাদের স্বাভাবিক মিত্র হিসেবে ভারতের বিরুদ্ধেও।

এরপর যখন সেই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ভারতেই আশ্রয় ও আতিথেয়তা পেলেন, ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভটা তাতে আরও বাড়লো।

সেই জায়গা থেকেই বাংলাদেশে যে ‘একটা অদ্ভুত রাগ’ ভারতের ওপর তৈরি হয়েছিল – আজকের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ঠিক সেটারই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই বিশেষজ্ঞ।

এত বিনিয়োগ, এত স্টেক – তবুও কেন অস্বস্তি?
কিন্তু যে বাংলাদেশে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ জড়িয়ে এবং সেখানে বিভিন্ন সেক্টরে ভারতের যে বিপুল বিনিয়োগ সেখানে তো অন্তত এসব সামরিক বা অর্থনৈতিক কারণেও দিল্লির পক্ষ থেকে একটা মসৃণ সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত ছিল?

ভারতের অর্থনীতিবিদ ও আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির বিশেষজ্ঞ ড. প্রবীর দে মনে করেন, ভারত যে বাংলাদেশে তাদের এই ইন্টারেস্টগুলো খরচের খাতায় ফেলে দিয়েছে তা নয় – তবে গোটা বিষয়টাকে একটা ‌‘পজ’ বা সাময়িক বিরতির মোডে রাখা হয়েছে।

দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্ক আরআইএস-এর এই অধ্যাপক বিবিসিকে বলেন, সম্পর্কটা বিগড়ে যায়নি। আমি সেটা বলবো না। সম্পর্কটা আছে … কিন্তু ব্যাপারটা এরকম যে দুটো বন্ধুর মধ্যে এখন কিছুদিন কথাবার্তা হচ্ছে না।

অন্যভাবে বললে, সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু আমরা ঠিক করেছি যে এখন কিছুদিন অন্যভাবে থাকা যাক। আমরা এখন ওয়েট করে আছি, বিশেষ করে ইন্ডিয়ার দিক থেকে, যে বাংলাদেশ কখন ‘ফার্স্ট মুভ’টা করবে।

তিনি আরও বলেন, এই ‘ফার্স্ট মুভ’ – বা সম্পর্কটা আবার স্বাভাবিক করতে কোনো এক পক্ষের দিক থেকে ইঙ্গিত সেটা বোধহয় বাংলাদেশে নির্বাচনের স্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা হলে বা একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পরই হবে বলে ভারতের ধারণা। আসলে বাংলাদেশ ও ভারত দুজনে দুজনকে নিয়েই থাকতে চায় – সেটাই স্বাভাবিক, কারণ প্রতিবেশী আমরা। প্রতিবেশীকে তো আর পাল্টানো যায় না।

প্রবীর দে বলেন, এবার যেটা হয়েছে যে একটা অদ্ভুত দৃশ্যপট তৈরি হয়েছে … দুই দেশের মধ্যে যে রিলেশনটা একাত্তর বা তারও আগে থেকে তৈরি হয়েছিল, যেটা সরকার পরিবর্তন হলেও ভেঙে যায়নি – এবারে সেখানে আঘাতটা লাগানো হচ্ছে। কুড়ালটা ওখানে মারা হয়েছে আর কী। সূত্র : বিবিসি।

ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাবে ভারতের শেয়ারবাজারে বড় ধস