জন্ম থেকে দুই হাত নেই। দুই পা থাকলেও একটি অপেক্ষাকৃত ছোট। সেই পা দিয়ে মোবাইল ও কম্পিউটার চালানোয় পারদর্শী মানিক রহমান। একই সঙ্গে পড়লেখাতেও অদম্য মেধাবী তিনি। পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর এবার বাজিমাত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাতেও। হাজী মুহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ভর্তি পরীক্ষায় ‘বি’ ইউনিটে মেধা তালিকায় ১৯২তম স্থান অধিকার করেছেন তিনি। পা দিয়ে লিখেই মানিকের এমন সাফল্যে খুশী মা-বাবাসহ স্বজনরা।
রোববার (১১ মে) দুপুরে ফলাফল প্রকাশিত হলে মানিকের সাফল্যে মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
মানিক রহমানের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামে। বাবা ফুলবাড়ি বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও মা সহকারী অধ্যাপক মরিয়ম বেগমের বড় ছেলে তিনি। শুধু এসএসসি এইচএসসিতে নয় মা-বাবা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় নিজের আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ-৫ অর্জন করেন মানিক রহমান।
জানা গেছে, মানিক ২০২২ সালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২৪ সালে নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন।
মানিকের বাবা মিজানুর রহমান ও মা মরিয়ম বেগম জানান, আমাদের দুই ছেলের মধ্যে মানিক বড়। ছোট ছেলে মাহীম নবম শ্রেণিতে পড়ে। মানিক জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার দুটি হাত নেই, একটি পা অন্যটার চেয়ে অনেকাংশে খাটো। কিন্তু প্রতিবন্ধী হলেও আমরা তাকে প্রতিবন্ধী মনে করি না। হাত না থাকায় ছোট থেকেই আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। পা দিয়ে লিখলেও তার লেখা অনেক সুন্দর ও পড়াশোনায় সে খুবই মনোযোগী। ওর স্বপ্ন ছিল একজন দক্ষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। সবার দোয়ায় আজ তার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নের দ্বার উন্মোচিত হলো।
মানিক রহমান বলেন, আমার দুটি হাত না থাকলেও আল্লাহর অশেষ রহমত, বাবা-মা ও শিক্ষকদের দোয়া ও অনুপ্রেরণায় আমি পিইসি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত সব পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছি। এ বছর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় ১৯২তম স্থান অধিকার করেছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন একজন দক্ষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারি।