জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ ও অন্যায়ের ভাগীদার হব কেন? একটি গোষ্ঠি অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমরা আওয়ামী লীগের দোসর, এসবের অপবাদের সত্যতা নেই, এর পেছনে ষড়যন্ত্র চলছে। সবাই বলে আমরা নাকি আওয়ামী লীগের দোসর। কিন্তু কীভাবে দোসর হলাম। আমরা শেখ হাসিনার কোনো ধরনের জনবিরোধী কাজের সঙ্গে ছিলাম না। আমরা বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের জনবিরোধী ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আওয়ামী লীগের দলীয়করণের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার ছিলাম।
আজ শুক্রবার (১ নভেম্বর) দুপুরে বনানী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদের এ কথা বলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
জিএম কাদের বলেন, আমাদেরকে বলা হয় আওয়ামী লীগের দোসর, কীভাবে? ২০০৮ সালে নির্বাচনে আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। সেই শেখ হাসিনার সরকারে আমি মন্ত্রী ছিলাম। তাই বলে আমরা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ ও অন্যায়ের ভাগীদার হব কেন? সেই সরকারের বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী থাকাকালে হজযাত্রীদের খারাপ বিমানে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তার প্রতিবাদে আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম। তখন এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে আমি যে সঠিক ছিলাম তা উঠে এসেছিল। যার কারণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে পদত্যাগ করতে দেয়নি।
জিএম কাদের আরও বলেন, জাতীয় পার্টির কখনও সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয়নি। আমরা সবসময় আলাপ-আলোচনা করে চলার চেষ্টা করেছি। ১৯৯০ সাল থেকে আমাদেরকে শেষ করার যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, এখনকার জাতীয় পার্টির নিয়ে যা হচ্ছে তা সেই ষড়যন্ত্রের অংশ। গত কিছুদিন ধরে একটা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের দোসর বলে নানা অপপ্রচার করছে। আমরা শুরুতে ভেবেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার এলে এটা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু, সেটা এখনও চলছে।
‘দেশ ভালো নেই’ মন্তব্য করে ‘আন্দোলন, কর্মসূচি চলবে’ বলে জানিয়েছেন জি এম কাদের। দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা মরতে চাই, দেখি কত লোক মারতে পারে। আল্লাহ আমাদের প্রটেকশন দিচ্ছে বলে এখনো বেঁচে আছি, অন্য কারও প্রটেকশনে নয়। বিচারের জন্য যদি আল্লাহর সাহায্যের দিকে চেয়ে থাকতে হয় তাহলে দেশ কীভাবে চলবে। আমরা একদিনের ডেমোক্রেসি চাই না। সব সময়ের ডেমোক্রেসি চাই। আমরা চাই সরকার হবে- ‘অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল’।
জিএম কাদের বলেন বলেন, আমরা দেশের জনগণের পাশে ছিলাম, সবসময় থাকব। আমার পরবর্তী প্রজন্ম এলেও জাতীয় পার্টি জনগণের পাশে থাকবে এবং একই ভাবে এগিয়ে যাবে। আমাদের ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের দুই তারিখের কর্মসূচি চলবে। আমাদের কর্মসূচি ও আন্দোলন সবই চলবে নিয়মতান্ত্রিক এবং অহিংসভাবে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, দেশটা এখন ভালো অবস্থায় নেই। শেখ হাসিনা দেশটাকে যেভাবে বিভক্তি করেছিলেন, এখন একইভাবে বিভক্তি করা হচ্ছে। এখন হাজার হাজার মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে জিএম কাদের বলেন, উনারা যা বলে তা-ই সঠিক, বাকি সবাই ভুল। উনারা এখন বিচারকার্যেও গিয়ে বাধা দেয়। উনাদের ইচ্ছা হলো আমাদের অফিস ভেঙে দিয়ে গেল। কারও যদি ভুল হয় সেখানে ব্যবস্থা নেওয়ার অনেক উপায় আছে, তাই বলে তাকে ধ্বংস করে দেবেন, এটা কেমন হবে।
জিএম কাদের বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা সবসময় সমর্থন জানিয়েছি। তাদের পক্ষে সে সময় অনেক কথা বলেছি, বিবৃতি দিয়েছি। যে কারণে আমার অনেক ক্ষতিও হতে পারতো। কিন্তু, এসব কিছুর পরোয়া আমরা করিনি। তারপরও আমাদের বিরুদ্ধে অন্যায় অপবাদ করা হচ্ছে।
জিএম কাদের বলেন, আমি এখন বলছি, জাতীয় পার্টি একটি জনগণের রাজনৈতিক দল। হয়তো সারা বাংলাদেশে আমাদের অবস্থান কিছুটা কম আছে, তবুও আমরা টিকে আছি। চাপে গর্তে ঢুকে গেলেও বারবার জাতীয় পার্টি উঠে দাঁড়ায়, এটাই অনেকের সহ্য হয় না। যে কারণে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়। জাতীয় পার্টি সবসময় জনবান্ধব দল ছিল, এখনও আছে এবং আগামীতেও থাকবে।
জিএম কাদের আরও বলেন, জাতীয় পার্টি কোনো সময় দলীয়করণ করেনি। জাতীয় পার্টি সবসময় বিভিন্ন দলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তবে একটি গোষ্ঠী জাতীয় পার্টির নামে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে নানা রকমের ষড়যন্ত্র করছে।
জিএম কাদের বলেন, অনেকে বলেন ১৫ বছর অবৈধ শাসনামল ছিল। তবে আমরা বলি সেটি ছিল ১০ বছর, ২০১৪-২০২৪ পর্যন্ত সরকারকে আমরা অবৈধ শাসনামল হিসেবে দেখছি। ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত শাসন আমলকে অবৈধ বলা ঠিক নয়, তবে খারাপ শাসনামল বলতে পারেন। ২০১৮ সালে সব দল শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তখন কি সব দল শেখ হাসিনার সরকারকে বৈধতা দেয়নি। এটা কি একা জাতীয় পার্টি দিয়েছিল?
জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমরা যখন নির্বাচনে যেতে চাই না, তখন জোর করা হয়। কিন্তু, যখন যেতে চাই, তখন বাধা আসে। জাতীয় পার্টি একটি রাজনৈতিক দল, আমাদের অধিকার আছে রাজনীতি করার, যে কোনো দলের সঙ্গে আমরা যেতে পারি। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি এখন কেমন যেন হয়ে গেছে। আমরা মনে করেছিলাম ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু এখন দেখছি দিন দিন তা বেড়েই চলছে। জনগণের ইচ্ছা প্রকাশ করতে দেওয়া হবে না, এটা কোন ধরনের দেশ।
জিএম কাদের বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে অনেক ভালো মন্ত্রী ছিল। তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হতো। যথেষ্ট ভাল সম্পর্ক ছিল। জামায়াতেরও অনেক ভালো নেতা-মন্ত্রী ছিল। তাদের সঙ্গেও আমার ভালো সম্পর্ক ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন- জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল করিম, শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও স্ত্রী শেরিফা কাদের প্রমুখ।
আরো পড়ুন : যে কারণে দ্রুত নির্বাচন চান মির্জা ফখরুল