জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত যে যার অবস্থান থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ শনিবার (১০ মে) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এক অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান।
তারেক রহমান বলেন, ‘নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে বিএনপি দেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, যে সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। তবে কেউ যেন আপনার-আমার আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার কুক্ষিত করে রাখার ষড়যন্ত্র করতে না পারে, সেজন্য জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা প্রত্যেকটি মানুষ—এই ঘরে যে মানুষগুলো আমরা উপস্থিত আছি, এই ঘরের বাইরে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা যে যেখানেই আছি, যে যার অবস্থান থেকে সর্তক এবং সজাগ থাকতে হবে। আপনাদের সবার কাছে আমি আজ সেই আহ্বান জানাই।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিরাপদ ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বের এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রই একমাত্র উত্তম বিকল্প। গণতান্ত্রিক বিশ্বে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে গণতন্ত্রবিরোধী যারা, তারা গণতন্ত্রের অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশে বিগত দশক ধরে যারা অথবা যে দলটি ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষন চালিয়েছিল, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে তারা অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা যদি ৭১ সাল, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, ৯০ সাল এবং সর্বশেষ ২৪ সালে বীর জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের যে ধারাবাহিকতা, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ বর্তমান দুটি বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত। তা হলো—এক. বাংলাদেশকে যাতে আর কেউ ভবিষ্যতে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে এবং দুই. গণতন্ত্রবিরোধী পলাতক অপশক্তি যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। এই দুটি বিষয়ে জনগণ আর কোনো আপস করতে রাজি নয়, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এটি আমি উপলব্ধি করি।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনগণের এই দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, যারা সংবিধান বারবার লঙ্ঘন করেছেন, দেশে অবৈধ সংসদ ও সরকার গঠন করেছে, যারা সংবিধান লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের জনগণ, সরকার ও রাজনীতিতে কোনোভাবেইগুম-খুন-অপহরণ-দুর্নীতি-লুটপাট-টাকাপাচার-বর্বর আয়নাঘরের প্রতিষ্ঠাতা পতিত পলাতক পরাজিত অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না এই বাংলাদেশের মানুষ।’
বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান হয়। ত্রিপিটক পাঠ করে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। ত্রিপিটক পাঠ করেন এম শ্রী ইন্দ্র বংশ ভিক্ষু, ভদন্ত সুধর্ম ভিক্ষু, ভদন্ত সমৈত্রী রতন ভিক্ষু ও আনন্দ প্রিয় শ্রমন। এ সময় বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বৌদ্ধ পূর্ণিমার শুভেচ্ছা জানান তারেক রহমান।
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান আরও বলেন, ‘বিএনপি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সফল দেখতে চায়। তবে এখানে একটি কথা রয়ে গেছে, সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণের সামনে যাতে স্বচ্ছ ধারণা থাকে, এই কারণে বিএনপি প্রথম থেকে এই সরকারের কাছে তাদের একটি কর্মপরিকল্পনা-পথনকশা ঘোষণার আহ্বান বারবার জানিয়ে এসেছে, জানিয়ে আসছে। সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা যদি জনমনে থাকে, তাহলে কোনো রকমের সংশয়-সন্দেহ কিংবা বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ থাকে না।’
ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের দুঃশাসন ও দুষ্কর্মগুলোর চিত্র এবং জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলি বেশি করে প্রকাশের জন্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
ফ্যাসিবাদী দেড় দশকে কক্সবাজারের রামু, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগর, রংপুর, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর বাড়ি-ঘর-উপাসনালয় ঘটনাবলি নিয়েও গণমাধ্যমের কাছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘কারা এসব ঘটনার নেপথ্যে ছিল, এসব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী দিনে আর কেউ দেশের ধর্মী জনগোষ্ঠীকে নিয়ে দলীয় রাজনীতিতে ব্যবহারের সাহস করবে না।’
তারেক রহমান বলেন, “আগামী দিনে বিএনপি জনগণের রায়ে ইনশাল্লাহ রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ফ্যাসিবাদী দেড় দশকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে যে অপ্রীতিকর, অনাহত ঘটনা ঘটেছে, তার নেপথ্য কারণ খুঁজে বের করতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ের একটি সর্বদলীয়, সর্বধর্মীয় ‘নাগরিক তদন্ত কমিশন’ গঠন করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।”
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘দলমত ধর্ম নির্বিশেষে দেশে প্রতিটি নাগরিকের প্রথম এবং প্রধান গর্বিত পরিচয় হচ্ছে, আমরা বাংলাদেশি। নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস বা সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা বজায় রেখেই বাংলাদেশি হিসেবে প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্র ও সমাজের সমান এবং ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে, এটি বিএনপির নীতি।’
বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সহসম্পাদক দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও সুভাষ চন্দ্রা চাকমার সঞ্চালনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক দিলীপ কুমার বড়ুয়া এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে মৈত্রী দেওয়ান, সমীর দেওয়ান, সাথী উদয় কুসম বড়ুয়া, প্রবীণ চাকমা, অনিমেষ চাকমা, নিকোলা চাকমা, প্রার্থ প্রীতম বড়ুয়া, চন্দ্রা চাকমা, মানস থু চাকমা, লু থু মু মারমা বক্তব্য দেন।
পরে গুলশান কার্যালয়ে অতিথি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্যদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।